Showing posts with label বাণিজ্য. Show all posts

Sakib May 06, 2024
ক্রিপ্টো দুনিয়ার হাঁড়ির খবর

ক্রিপ্টোগ্রাফি আদতে গ্রিক শব্দ ‘ক্রিপ্টোস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ গোপনীয়তার চর্চা

“তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখোনা মনে” এই জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত অনেকের মতো আমারও খুব প্রিয় গান। তবে আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় এই গানকে কেউ যদি জীবনের মূলমন্ত্র করে নেন, তবে তাঁর পক্ষে জীবনে পথ চলায় সমূহ বিপদ। কেন বলছি এ কথা? আজকের স্মার্ট জগতে অ্যান্ড্রয়েড স্ক্রিনলক কিম্বা এটিএম সব কিছুই কতগুলি বৈজ্ঞানিক সংকেতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ দিকে আমাদের আশেপাশে তথাকথিত শিক্ষিত ডিগ্রিধারীদের মাঝেই কিছু অসৎ ব্যক্তি মুখিয়ে আছে  কোনও রকমে এই সব সংকেতের হদিশ পেয়ে আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করার জন্য। অনেক সময়ই আমরা শুনি, কিছু মানুষ ভুয়ো পরিচয় দেওয়া  অজ্ঞাত  ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে ওটিপি বলে দেওয়ার ফলে নিমেষে রীতিমতো ফকির হয়েছেন, কারোর ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে। ইদানীং আরও ভয়ানক কিছু ঘটনা ঘটছে, ফোনে বিভিন্ন সংস্থার নামে ভুয়ো মেসেজ পাঠানো আদতে জালিয়াতির প্রথম ফাঁদে, পরদিন কাগজে হেডলাইন এক ক্লিকে লক্ষাধিক অর্থ গায়েব। তা এই গোপন সংকেতের প্রচলনই বা কবে হল? কেনই বা হল? আর আজই বা সাংকেতিক বার্তার প্রেক্ষাপট বা ব্যবহারের ধরন কী রকম?

ক্রিপ্টো দুনিয়ার হাঁড়ির খবর

শেয়ার কেনাবেচা চলছে স্টক মার্কেটে

ঐতিহাসিক নিদর্শন বলছে, স্পার্টাদের স্কাইটেলের মাধ্যমে প্রথম সাংকেতিক বার্তার ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটে। স্কাইটেলে অর্থাৎ খাঁজকাটা কাঠের টুকরোয় প্রথমে ফিতের মতো করে একটি কাগজ জড়িয়ে তাতে বামদিক থেকে ডানদিকে একটি অর্থবহ বাক্য লেখা হত। তারপর কাগজটি খুলে নিলেই শব্দগুলো ও অক্ষরগুলো অবিন্যস্ত হয়ে যেত, ফলে সহজেই সংকেতের উদ্ধার সম্ভব হতনা। এরপর মিশরীয় হায়রোগ্লিফস বা ক্লে ট্যাবলেট, অনেক কিছুতেই সাংকেতিক বার্তা প্রেরণের নিদর্শন মিলেছে। মোম মাখানো কাঠের ট্যাবলেটে গোপন বার্তা পাঠিয়ে পারস্যের রাজা জেরেক্সেসের সম্ভাব্য আক্রমণ স্তিমিত করে দিয়েছিলেন ডেমারেটাস নামক একজন গ্রিক, যিনি এককালে চুরির দায়ে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। আজকের যুগে এই দেশপ্রেম ও বিরল। গ্রিক রাজা হিস্টাইরাসের আমলে প্রথমে বার্তাবাহকের নেড়া মাথায় বার্তা লিখে চুল গজালে তারপর তাকে পাঠানো হত, যা আজকের দিনে অনেকটাই বোকামি, সময়ের নিরিখে। ক্যাপসুলের আড়ালে মসলিনে লেখা চিনা বার্তা কিংবা আরবীয়দের পলিঅ্যালফাবেটিক সাইফার অর্থাৎ বহুবর্ণী সাংকেতিক লিখন প্রণালী কিংবা রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের প্রবর্তিত সেই বিখ্যাত সিজার সাইফার (যেখানে বার্তার প্রতিটি অক্ষরকে ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী ঠিক তার পরবর্তী তৃতীয় অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হত) সবই ক্রিপ্টোগ্রাফিক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। সাইফার হচ্ছে আসল বার্তার সাংকেতিক রূপ। ক্রিপ্টোগ্রাফি আদতে গ্রিক শব্দ ‘ক্রিপ্টোস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ গোপনীয়তার চর্চা। এবার প্রশ্ন হল গোপনীয়তা কিভাবে বজায় রাখব? ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুকে ‘গুগল পে’র মাধ্যমে একশো টাকা পাঠাতে গিয়ে দেখলেন, আপনারই অ্যাকাউন্ট কোনও ভাবে হ্যাক করা হল, বা নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যায় আপনারই অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচশো টাকা কেউ তুলে নিল। কী ভাবে হল এই অসাধ্য সাধন? আপনার  বা আপনার বন্ধুর এই যোগাযোগের মাধ্যমে মুকুলের সেই কোনও এক ‘দুষ্টু লোক’ আড়ি পেতে বসেছিল, সুযোগ বুঝে মাঠে নামতেই আপনার টাকা ‘ভ্যানিশ’।

ক্রিপ্টো দুনিয়ার হাঁড়ির খবর

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের ব্যবহৃত এনিগমা মেশিন

আপনি ভাবছেন, ধুর বাজে কথা বলার জায়গা পায়নি, ‘গুগল পে’তে এসব জোচ্চুরি হয় না। মানলাম, তাই বলে কোথাও কোনও মাধ্যমে এই তৃতীয় অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বসে নেই, এটাতো গ্রহনযোগ্য নয় মোটেই। তাই আপনাকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আজ থেকে কতদিন আগে একটি বিশ্বযুদ্ধে এই ক্রিপ্টোগ্রাফি নামক শাখার ব্যবহার সারা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল, যা নিয়ে আজও আলোচনা খুব কমই শোনা যায়। বোমা, লাঠি, মারদাঙ্গার বাইরের পৃথিবীতে মস্তিষ্কের উপযোগী প্রয়োগ সবচেয়ে জরুরি। এ ক্ষেত্রে জার্মান এনিগমা মেশিনের উল্লেখ না করলে বড়ো অন্যায় হবে। আর্থার শার্বিয়াস নামের এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোকের দ্বারা টাইপরাইটারের আদলে তৈরি এই এনিগমা যন্ত্র। যন্ত্রে থাকা তিন থেকে পাঁচটি রোটরের চাকতিকে ইংরেজি বর্ণমালার প্রত্যেক অক্ষরের সাপেক্ষে ২৬টি ধাপ ঘোরানো যেত, ঘড়ির কাঁটার সাথে এর যথেষ্ট সাদৃশ্য ছিল। দুর্বোধ্য কোড বানিয়ে নাৎসিদের বার্তা প্রেরণের কৌশল এবং অ্যালান টুরিং নামক এক যুগপুরুষ কর্তৃক এই এনিগমা কোডের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, এগুলো আজ কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। (চলবে)

চিত্রসৌজন্য:  https://pixabay.com

Sakib May 06, 2024

 

বিকাশ ক্যাশ আউটের সুবিধা বেড়ে ডাবল

বিকাশ ক্যাশ আউটের সুবিধা বেড়ে ডাবল

হাজারে ১৪.৯০ টাকায়, ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশ আউট করুন ২টি প্রিয় এজেন্ট নাম্বার থেকে! বিকাশ-এ এখন কম খরচে ক্যাশ আউটের সুবিধা ডাবল! এখন একটি ক্যালেন্ডার মাসে একজন গ্রাহক যেকোনো ২টি এজেন্ট নাম্বারকে প্রিয় এজেন্ট নাম্বার হিসেবে সেট করতে পারবেন আর ক্যাশ আউট করতে পারবেন ১.৪৯% চার্জে প্রতি মাসে, ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত!

  • একজন গ্রাহক এক ক্যালেন্ডার মাসে ক্যাশ আউটের জন্য প্রিয় এজেন্ট নাম্বার হিসেবে যেকোনো ২টি বিকাশ এজেন্ট নাম্বার বেছে নিতে পারবেন এবং একজন গ্রাহকের যেকোনো মুহূর্তে সর্বোচ্চ ২টি প্রিয় এজেন্ট নাম্বার থাকতে পারে।
  • গ্রাহক প্রিয় এজেন্ট নাম্বার থেকে ১.৪৯% চার্জে ক্যাশ আউট করতে পারবেন।
  • ১.৪৯% ক্যাশ আউট চার্জ একটি ক্যালেন্ডার মাসে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রযোজ্য।
  • ২টি প্রিয় এজেন্ট নাম্বারই যদি প্রথমবার যোগ করা হয়, সেক্ষেত্রে গ্রাহকরা উক্ত ক্যালেন্ডার মাসের মধ্যে কোনো প্রিয় এজেন্ট নাম্বার পরিবর্তন করতে পারবেন না। পরবর্তী ক্যালেন্ডার মাস থেকে, গ্রাহক প্রথমে সেভ করা প্রিয় এজেন্ট নাম্বার বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২টি প্রিয় এজেন্ট নাম্বার পরিবর্তন করতে পারবেন।তবে, যদি ইতোমধ্যে ১টি প্রিয় এজেন্ট নাম্বার যোগ করা থাকে, তবে গ্রাহক যেকোন ক্যালেন্ডার মাসে আরও একটি যোগ করতে এবং পূর্বেরটি পরিবর্তন করতে পারবেন।
  • গ্রাহক *247# এবং বিকাশ অ্যাপ উভয়ের মাধ্যমে প্রিয় এজেন্ট নাম্বার যোগ/বাদ দিতে পারবেন
  • গ্রাহক *247# এবং বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রিয় এজেন্ট নাম্বার চেক করতে পারবেন
  • গ্রাহক *247# এবং বিকাশ অ্যাপ উভয়ের মাধ্যমে ১.৪৯% ক্যাশ আউট চার্জের জন্য প্রযোজ্য লিমিট বা অবশিষ্ট পরিমাণ দেখতে পারবেন
  • যদি কোনো ক্যাশ আউট লেনদেন ৫০,০০০ টাকার লিমিট অতিক্রম করে, তাহলে সেই লেনদেনের পরিমাণের জন্য ১.৮৫% ক্যাশ আউট চার্জ প্রযোজ্য হবে এবং প্রিয় এজেন্ট ক্যাশ আউট লিমিট ব্যবহার হয়ে যাবে।

উদাহরণ: একজন গ্রাহক ইতোমধ্যে এক মাসে তার প্রিয় এজেন্ট নাম্বার থেকে ৪৯,৫০০ টাকার ক্যাশ আউট লেনদেন করেছেন। এখন, তিনি যদি প্রিয় এজেন্ট নাম্বার থেকে ৬০০ টাকা (মোট ৫০,১০০ টাকা) ক্যাশ আউট করতে চান, তাহলে ১.৮৫% ক্যাশ আউট চার্জ প্রযোজ্য হবে এবং প্রিয় এজেন্ট ক্যাশ আউট লিমিট খরচ হবে।

কম খরচে ক্যাশ আউট করার সহজ নিয়মঃ
প্রিয় এজেন্ট নাম্বার সেট করুন;
ক্যাশ আউট করার আগে প্রিয় এজেন্ট নাম্বারে লিমিটের কত বাকি আছে তা দেখে নিন;
প্রিয় এজেন্ট নাম্বারে লিমিটের বাকি অংশ আগে ক্যাশ আউট করে নিন।

প্রিয় নাম্বার ছাড়া অন্য যেকোনো এজেন্ট নাম্বার থেকে ক্যাশ আউট
প্রিয় এজেন্ট নাম্বার ছাড়া যেকোনো এজেন্ট নাম্বার থেকে অ্যাপ এবং *247# ডায়াল করে উভয় মাধ্যমে ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে ১.৮৫% চার্জ প্রযোজ্য হবে।
অ্যাপ এবং *247# ডায়াল করে উভয় চ্যানেলের জন্য প্রযোজ্য।

পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত

পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ছয় মাস পর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ভারত। আজ শনিবার দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার তথ্য জানিয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, ডিজিএফটি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস-এমইপি) নির্ধারণ করেছে ৫৫০ ডলার। সরকারের এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে।

গত মার্চ মাসের শেষ দিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। তখন বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, চলমান লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের বাজারে যেন পেঁয়াজের দাম না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই দেশটির সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল।

এই খবরে ভারতের মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষিরা স্বস্তি পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি হলো, ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মহারাষ্ট্রে। জানা যায়, এপ্রিল মাসে ওই রাজ্যের কিছু পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ১ হাজার ২০০ রুপিতে নেমে আসে; গত ডিসেম্বর মাসে যে দাম ছিল ৪ হাজার ৫০০ রুপি। নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই মহারাষ্ট্রের চাষিরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিলেন। ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের পক্ষে ছিল। এবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পেঁয়াজ রপ্তানি একেবারে বন্ধ করেনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশে প্রায় এক লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয় তারা। বাকি পাঁচটি দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান, বাহরাইন, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কা।

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। গত ডিসেম্বরে তারা প্রথম পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু তারপর অনির্দিষ্টকালের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়।

বাংলাদেশ যত পেঁয়াজ আমদানি করে, তার সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। ভারতের পেঁয়াজ না আসায় দেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ‘গাবতলী গবাদিপশুর হাট’ ইজারার দরপ্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ওরফে ডিপজল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ইজারামূল্যের পুরো টাকা পরিশোধ করেননি। এরই মধ্যে হাট দখলে নিয়ে তাঁর কর্মীদের দিয়ে হাসিল আদায় করছেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো টাকা পরিশোধ না করায় ডিপজলকে এখনো কার্যাদেশ প্রদান ও হাট হস্তান্তর করা হয়নি। তাঁদের দাবি, হাটে করপোরেশনের নিজস্ব কর্মীরা হাসিল আদায় করছেন।

গাবতলী পশুর হাটের ইজারা দিতে (বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য) গত ২ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ। দরপত্রে অংশ নেওয়া দুই ব্যক্তির মধ্যে ডিপজলের প্রস্তাবিত ইজারামূল্য ছিল সর্বোচ্চ, ১৭ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর আগের ইজারাদার লুৎফর রহমান দর দিয়েছিলেন ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।

হাটের ইজারাসংক্রান্ত কিংবা ডিপজলের টাকা পরিশোধ না করেই হাট দখলে নেওয়ার মতো অনিয়মগুলো লুকাতে সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা ও অন্য কর্মীদের রাখঢাক করার বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে মাহে আলমের সুযোগ ছিল ডিপজলের জামানত বাজেয়াপ্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।

দরপত্র যাচাই শেষে সর্বোচ্চ দরদাতা ডিপজলকে ইজারামূল্যের সঙ্গে অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে গত ২১ মার্চ চিঠি দেয় ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ। চিঠিতে দরপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া জামানতের ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বাদে আরও ১৭ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা সাত কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।

কিন্তু ডিপজল নির্ধারিত সময়ে পুরো টাকা পরিশোধ না করে গত ৩১ মার্চ উত্তরের মেয়র বরাবর টাকা জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। সময় চান হাট হস্তান্তরের আগের দিন, অর্থাৎ গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত (চৈত্র মাসের ৩০ তারিখ)। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও পুরো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন ডিপজল।

টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে দরদাতার জামানত বাজেয়াপ্ত করার বিষয় দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল। বিজ্ঞপ্তির ১২ নম্বরে উল্লেখ আছে, দরপত্র গৃহীত হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে দরমূল্য (জামানত বাদে বাকি টাকা), অনুমোদিত দরের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ১০ শতাংশ আয়কর, ইজারামূল্যের ওপর ৫ শতাংশ জামানত (ফেরতযোগ্য) পে-অর্ডার করে জমা দিতে হবে। ব্যর্থ হলে দরপত্রের সঙ্গে দেওয়া দরমূল্যের ৩০ শতাংশ জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে।

করি নাই (টাকা পরিশোধ), করব। এটা আমি সিটি করপোরেশনকে বলব। আপনি কে? আমি টাকা পরিশোধ করি বা করি না, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ডিপজল, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা

সব মিলিয়ে হাটের ইজারা পেতে ডিপজলের পরিশোধ করার প্রয়োজন ছিল ২২ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু সিটি করপোরেশন ডিপজলের জামানত বাজেয়াপ্ত করেনি।

হাট দখল করে হাসিল আদায়

রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট  
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট
ছবি: প্রথম আলো

গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, ডিপজলের নিয়োজিত কর্মীরা হাট পরিচালনা করছেন। পশু কিনতে আসা ব্যবসায়ী, কসাই ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করছেন হাসিলের টাকাও। সেখানে করপোরেশনের কর্মীদের কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

হাটের প্রবেশপথে হাসিল আদায় করার নির্মাণাধীন কক্ষের দেয়ালে ছিল একটি ব্যানার টানানো। তাতে লেখা, ইজারাসূত্রে মালিক ‘আলহাজ মনোয়ার হোসেন ডিপজল’। পাশের আরেকটি কক্ষে হাসিল আদায় করছিলেন এক ব্যক্তি।

দেওয়ান মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে ডিপজলের ভাতিজা বলে পরিচয় দেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হাটের বর্তমান ইজারাদার তাঁর চাচা ডিপজল। সিটি করপোরেশন গত ১৫ এপ্রিল তাঁদের কাছে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে। ওই দিন থেকেই তাঁরা হাসিল আদায় করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পত্তি বিভাগের একজন কর্মী প্রথম আলোকে জানান, ডিপজলের লোকেরাই হাট চালাচ্ছেন। হাটে হাসিল আদায়ের বিষয়ে তাঁদের কাউকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।  

তথ্য প্রদানে অসহযোগিতা

ইজারার তথ্য জানতে গত বুধবার এই প্রতিবেদক যান উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলমের কাছে। তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেনের মাধ্যমে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। জনসংযোগ কর্মকর্তাকেও তিনি কোনো তথ্য দেননি।

হাট ইজারা নিতে ডিপজল মোট কত টাকা পরিশোধ করেছেন, কত টাকা এখনো বকেয়া আছে, কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে কি না, কবে হাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বকেয়া টাকা পরিশোধে কত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে—এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল।

হাটের ইজারাসংক্রান্ত কিংবা ডিপজলের টাকা পরিশোধ না করেই হাট দখলে নেওয়ার মতো অনিয়মগুলো লুকাতে সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা ও অন্য কর্মীদের রাখঢাক করার বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে মাহে আলমের সুযোগ ছিল ডিপজলের জামানত বাজেয়াপ্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।  

হাট হস্তান্তরে আদালতের নির্দেশ

নির্ধারিত সময়ে ডিপজল পুরো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে গত ৪ এপ্রিল ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলমের কাছে হাট ইজারা নিতে আবেদন করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা লুৎফর রহমান। আবেদনে তিনি ডিপজলের দেওয়া সর্বোচ্চ দরটাই পরিশোধ করে ইজারা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু করপোরেশন থেকে কোনো সাড়া পাননি তিনি।

পরে উচ্চ আদালতে হাটের ইজারা নিয়ে একটি রিট করেন লুৎফর রহমান। গত ২৩ এপ্রিল রিটের নিষ্পত্তি করেন আদালত। আদেশে লুৎফর রহমানকে সর্বোচ্চ দর ১৭ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার অনুমতি দিতে এবং ১৪৩১ সনের জন্য তাঁর কাছে হাটটি হস্তান্তর করতে বলা হয়। রিটের বিবাদী উত্তর সিটির মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেন আদালত।

লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায়ের অনুলিপি ও হাটের জন্য ব্যাংক পে-অর্ডারের সঙ্গে একটি আবেদন নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল তিনি সিটি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা—কোনো দপ্তরেই তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।


নির্মাণাধীন হাসিল আদায় কক্ষ  
নির্মাণাধীন হাসিল আদায় কক্ষ
ছবি: প্রথম আল

উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইজারাদারকে এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। কারণ, কিছু টাকা বাকি আছে। ওই টাকা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অবিলম্বে টাকা জমা না দিলে তাঁকে হাট ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে। হাটটি বর্তমানে খাস আদায় পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডিপজলের হাট দখল ও তাঁর কর্মীদের মাধ্যমে পরিচালনা করার বিষয়টি জানানো হলে মীর খায়রুল আলম বলেন, ‘আমাদের লোক হাসিল আদায় করছে। দৈনিক ভিত্তিতে টাকা জমা হচ্ছে। যদি ওই রকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে।’ আদালতের রায়সংক্রান্ত কোনো কাগজ তাঁরা পাননি বলেও জানান তিনি।

এদিকে কার্যাদেশ ছাড়াই হাট দখল ও পরিচালনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় একাধিকবার ডিপজলের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তাও পাঠানো হয়। পরে প্রতিবেদককে ফোন করে তিনি গতকাল শনিবার এফডিসিতে সরাসরি দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান।


গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিপজলের মুঠোফোনে আবারও বার্তা পাঠিয়ে গতকাল দেখা করার সময় জানতে চাওয়া হয়। তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাই গতকাল সকাল ১০টার কিছু পর তাঁর মুঠোফোনে কল করে সময় জানতে চান এই প্রতিবেদক। তখন তিনি জানান, এফডিসির সভা স্থগিত করা হয়েছে। তাই তিনি সেখানে যাবেন না।

পরে হাটের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে ডিপজল বলেন, ‘গাবতলী হাট নিয়ে আপনার কিসের দরকার? সিটি করপোরেশন জানে, আমি দিছি (ইজারার টাকা) কি দেই নাই। আমার টাকা ক্লিয়ার।’ এ সময় উত্তেজিত হয়ে ‘রাখেন টেলিফোন’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

পুরো বক্তব্য জানতে ডিপজলকে আবার ফোন করা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘করি নাই (টাকা পরিশোধ), করব। এটা আমি সিটি করপোরেশনকে বলব। আপনি কে? আমি টাকা পরিশোধ করি বা করি না, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’



[random][fbig2][#e74c3c]
Powered by Blogger.