Showing posts with label আবহাওয়া. Show all posts

Sakib May 06, 2024

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় হঠাৎ ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে পাকা ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রবিবার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার কুল্লাগড়া, দুগার্পুর সদর, গাওকান্দিয়া, চন্ডিগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ মৌসুমে এমন শিলাবৃষ্টি পড়তে কখনো দেখেননি বলে জানান স্থানীয় কৃষকগণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ জমির ধান কাটার উপযুক্ত হয়ে গেছে তবে শ্রমিক বা ধান কাটার মেশিন সংকটে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। গত রাতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ধানের শিষ থেকে বেশিরভাগই ধান ঝরে গেছে। জমির পাকা ধানগুলো ঘরে তোলার আগেই শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে এমন ক্ষতি যেনো কৃষকদের মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাছাড়া এই শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফল ও গাছেরও ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।


 

কুড়ালিয়া গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, আমি ১৭ কাটা জমি লাগিয়েছিলাম কিন্তু ভাইরাসের জন্য ৭ কাটা কেটে ফেলি। সেই ৭ কাটায় ১০ মণ ধান পেয়েছি মাত্র। বাকি ১০ কাটা জমির পাকা ধান গতরাতে শিলাবৃষ্টিতে ঝরে গেছে। কয়েকদিন ধরেই কাটার জন্য চেষ্টা করছিলাম কিন্তু মেশিন পাচ্ছিলাম না। 
 

এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিপা বিশ্বাস বলেন,এ পর্যন্ত ৪৫% জমির ধান কর্তন হয়েছে। তবে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে অফিসের লোকজন মাঠে আছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানাতে পারবো।

Sakib May 06, 2024
আটপাড়ায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু

আটপাড়ায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু

 

নেত্রকোনার আটপাড়ায় হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দিলোয়ার মিয়া (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার স্বরমুশিয়া হাওরে বজ্রপাতে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষক দিলোয়ার মিয়া উপজেলার স্বরমুশিয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাওহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই কৃষক সকালে নিজের জমির ধান কাটতে গেলে বজ্রপাতে আহত হন।

পরে অন্যরা উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর
আবহাওয়া অধিদপ্তরছবি: অধিদপ্তরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ বৃহস্পতিবার চলতি মে মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান এ পূর্বাভাস দেন। সেখানে মে মাসের গরম, তাপপ্রবাহ বৃষ্টি , নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়—এসব নানা বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিই হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এমন অবস্থা গত ৭৬ বছরে হয়নি বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছিল।

তবে মে মাসের তাপমাত্রা এপ্রিল মাসের চেয়ে কিছুটা কম থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন,  মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা একটু বেশি থাকতে পারে। তবে তা এপ্রিলের মতো অবস্থায় যাবে না। তাপপ্রবাহ এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে না।

মে মাসে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর দুই থেকে তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি ও তীব্র কালবৈশাখী হতে পারে।

চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলেও এ বার্তায় বলা হয়েছে।

এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সিলেটসহ হাওর অঞ্চলে) নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। কিছু কিছু জায়গায় তা বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে।

মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হার ২৭৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। তবে গত এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮১ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছে।  ঢাকায় বৃষ্টি কম হয়েছে ৯১ শতাংশ। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এপ্রিলে কোনো বৃষ্টিই হয়নি।

তিস্তা সেচক্যানেলের উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রংপুরের তারাগঞ্জের দৌলতপুরে
তিস্তা সেচক্যানেলের উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রংপুরের তারাগঞ্জের দৌলতপুরে
ছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। গাছ না থাকলে তাপমাত্রা বাড়ে। একটি এলাকার আয়তন অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক গাছ থাকা প্রয়োজন। রংপুরের তারাগঞ্জে সে অনুযায়ী গাছের সংখ্যা অনেক কম। অথচ বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে এ উপজেলায় তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাঁচ কিলোমিটার অংশের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা।

বন বিভাগ বলছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা সেচ ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য চাপ দেওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাছগুলো কেটে ফেলছে। পাউবোর কর্মকর্তারাও গাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেছেন, সেচ ক্যানেলের ওই অংশে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।

তারাগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কোনো এলাকার মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও তারাগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে তিন ভাগেরও কম বনভূমি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বনায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কেল্লাবাড়ি থেকে তারাগঞ্জ উপজেলার মিনিটের স-মিল পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে গাছ লাগায় বন বিভাগ। সমিতির মাধ্যমে উপকারভোগী নির্ধারণ করে গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এসব গাছ কেটে ফেলা হলে এ এলাকার বনভূমি ১ শতাংশের নিচে পৌঁছাবে। সবকিছু জানার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়নমূলক কাজে গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য দরপত্র আহ্বান বন বিভাগ। ইতিমধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

উপকারভোগী, ঠিকাদার ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সেচ ক্যানেলের পাঁচ কিলোমিটারে লাগানো দেড় সহস্রাধিক গাছ বিক্রি করা হয়। ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়। গাছ বিক্রির ৫৫ শতাংশ টাকা উপকারভোগী, পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০ শতাংশ, বন বিভাগ ১০ শতাংশ, সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ ৫ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ গাছ বিক্রির টাকা দিয়ে পুনরায় বনায়ন করার নিয়ম।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তিস্তা সেচ ক্যানেলের তারাগঞ্জ সেতুর কাছে থেকে কেল্লাবাড়ি পর্যন্ত দুই পাশের সব গাছ কাটা হচ্ছে। শ্রমিকের তাপপ্রবাহের মধ্যে গাছগুলো কেটে ট্রলিতে নিয়ে যাচ্ছেন। যেসব গাছ এখনো কাটা হয়নি, সেগুলোর ছায়ায় বসে শ্রমিক ও পথচারীরা বিশ্রাম নিচ্ছেন।

তিস্তা সেচক্যানেলের উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রংপুরের তারাগঞ্জের দৌলতপুরে
তিস্তা সেচক্যানেলের উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রংপুরের তারাগঞ্জের দৌলতপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সেখানে কথা হয় পাশের দৌলতপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তারাগঞ্জ তিস্তা সেচ ক্যানেল সেতু থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ৫০০ মিটার। মিজানুর রহমান আক্ষেপ করেন, ‘সউগ গাছ কাটি সড়কটাক নাড়িয়া (গাছশূন্য) বানাইছে। তাপোতে নিকাশ খড়ে যাওছে (নিশ্বাস নিতে কষ্টে হচ্ছে), মাটিত পাও থোয়া যাওছে না। বাড়ি থাকি এতোকোনা জায়গা হাটি আসনু, তাতে শরীর কুলাওছে না। কয়দিন আগোতও দুপুরে রাস্তাটা দিয়া হাঁটি গেইলে গাওত বাতাস নাগছিল, এ্যালা খালি আগুন ধরা রইদ নাগোছে। গাছগুলো না কাটলে কি হইল হয়।’

আরেক পথচারী অনন্তপুর গ্রামের ডালিম রায় বলেন, ‘বড় গাছগুলা কাটি ছোট গাছগুলো থুইলেও ছায়া পাইনো হয়। চলাচল করতে রইদ থাকি বাঁচনো হয়। কিন্তু এরা সড়কটাক মরুভূমি বানে থুইল। ফির কদ্দিন গাছ নাগাইবে, তাক কদ্দিন বড় হইবে, তারপর ছায়া পামো। তত দিন রইদোত পুড়ি মরি।’

গাছ কাটা শ্রমিক দলের সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, সোমবার পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দুই কিলোমিটারের ৭২০টি গাছ কাটা হয়েছে। বাকি গাছগুলো দু–এক দিনের মধ্যে কাটা হবে।

কথা হয় ক্যানেলের পাশে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী লিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবুজে ভরা সড়কটিতে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতাম। কলেজ যাওয়ার পথে রোদ-বৃষ্টিতে লুকাতাম। কিন্তু এখন শুধু সূর্যের কড়া তাপ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না।’

তিস্তা সেচ ক্যানেলের গা ঘেঁষে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ, শিশুনিকেতন, তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এ ছাড়া এক কিলোমিটারে মধ্যে আর পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যানেলের দুই ধারে গাছ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যেত। হাজারো গাছের ছায়াতলে আশপাশের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০টি গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী ক্যানেলের সড়ক ধরে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করত। কিন্তু এখন সব কটি গাছ কেটে ফেলায় তাদের চলাচলে কষ্ট হবে।’

তারাগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরাও পারি’র সভাপতি আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৩ শতাংশ বনায়ন যথেষ্ট নয়। তার ওপর কলকারখানার ধোঁয়া-বাতাস দূষিত করছে। এরই মধ্যে দেশে টানা এক মাসের বেশি প্রচণ্ড তাপমাত্রায় বন বিভাগ গাছগুলো উজাড় করছে। এটা অন্যায়, তারাগঞ্জের মানুষের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। গাছগুলো কাটা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।’

জানতে চাইলে গাছ ঠিকাদার তৌহিদুল ইসলাম জুয়েল মুঠোফোনে বলেন, ‘টেন্ডারের মাধ্যমে আড়াই মাস আগে গাছগুলো কিনেছি। তাই কাটছি সমস্যা কী? টেন্ডার দেওয়ার সময় বন বিভাগের চিন্তা করা উচিত ছিল। আপনার বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান রোকন বলেন, তিস্তা সেচ ক্যানেলের তারাগঞ্জের পাঁচ কিলোমিটার অংশের পানি উন্নয়ন বোর্ড উন্নয়নমূলক কাজ করছে। তাঁরা (পাউবো) গাছগুলো কাটার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিল। তাই ঠিকাদাররা গাছ কাটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আবার সেখানে গাছ লাগানো হবে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৪টি গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

তারাগঞ্জের ইউএনও রুবেল রানা বলেন, ‘তাপপ্রবাহের মধ্যে গাছগুলো না কাটার জন্য বন বিভাগকে বলেছি।’

এ বিষয়ে কথা হলে পরিবেশবাদী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ক্যানেলে দুই দিকে যে পরিমাণ গাছ কেটেছে, সেটাই পরিবেশের ক্ষতি। বাকি যে গাছগুলো আছে, সেগুলোকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।

এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈয়দপুর কার্যালয়ের উপপ্রকৌশলী রাউফুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, তিস্তা সেচ ক্যানেলে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। সে কারণে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী গাছগুলো কাটার সময়ও হয়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফের গাছ লাগানো হবে।

ঘর ঠান্ডা রাখতে বারান্দায় গাছ রাখুন
ঘর ঠান্ডা রাখতে বারান্দায় গাছ রাখুন
ছবি: অধুনা

গরমের ধরন মনে হচ্ছে বদলে গেছে। যেসব বাড়িতে আগে ফ্যানের বাতাসেই দিব্যি গোটা গ্রীষ্মটা কাটিয়ে দেওয়া যেত, সেসব বাড়ির বাসিন্দারাও আজকাল অনলাইনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের (এয়ার কন্ডিশনার, সংক্ষেপে এসি) দামদরের খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু অনেকের জন্যই এসি এখনো এক বিলাসিতার নাম। প্রচণ্ড গরমে একটু শান্তির জন্য হলেও খুঁজতে হয় বিকল্প ব্যবস্থা। এই গরমে কীভাবে নিজের বাসা ঠান্ডা রাখবেন, সে উপায়ই বাতলে দেওয়া হয়েছে।

বাইরে রোদ উঠলে ঘরে পর্দা টেনে দিন
বাইরে রোদ উঠলে ঘরে পর্দা টেনে দিন
ছবি: অধুনা

সকাল সকাল পর্দা টেনে দিন

সকালের মিঠে রোদ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই সকালে রোদ উঠতে না উঠতেই পর্দা টেনে দিন। এতে করে সহজে ঘরে তাপ ঢুকবে না। ঘরও তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে।

দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার করলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার করলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
ছবি: অধুনা

দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার

মনে রাখবেন, রং যত গাঢ় হয়, তত আলো শোষিত হয় এবং যত হালকা হয়, তত আলো বেশি প্রতিফলিত হয়। ঘরে যত বেশি আলো শোষিত হয়, তত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘরের ভেতর যতটা সম্ভব হালকা রং ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে দিনের বেলা ঘর তাপ ধরে রাখবে না। ফলে আলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ঠান্ডা হতে শুরু করবে।

ভারী সুতি পর্দা ব্যবহার

জানালায় ভারী সুতি পর্দা ব্যবহার করুন। এ ধরনের পর্দা ঘরে আলো প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এ ছাড়া হালকা রঙের বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ব্যবহার করুন। এতে করে বিছানাপত্র তাপ ধরে রাখবে না। ঘরও থাকবে তুলনামূলক ঠান্ডা।

ঘরে যতটা সম্ভব কম আলো জ্বালানো ভালো
ঘরে যতটা সম্ভব কম আলো জ্বালানো ভালো
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঘর রাখুন অন্ধকার

ঘরে আলোর পরিমাণ যত কম থাকে, ঘর তত বেশি ঠান্ডা থাকে। রাতে কাজ করলে চেষ্টা করবেন ঘর যতটা সম্ভব কম আলোকিত রাখতে। টিউবলাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা গেলে ভালো। এতে করে ঘর তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে।

ঘরে রাখতে পারেন ছোট গাছ

ঘরে গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
ঘরে গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
ছবি: খালেদ সরকার

ঘরের ভেতর ছোট্ট একটি গাছ, যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। গাছ ঘরের ভেতর জমা হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, ফলে ঘরের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম-জাতীয় গাছ ঘরের সৌন্দর্যবর্ধন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উভয় কাজেই বেশ উপকারী।

ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন

ঘরের তাপমাত্রা কম রাখতে একটু ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন। প্রয়োজন হলে একবারের পরিবর্তে ঘর মুছতে পারেন বেশ কয়েকবার। মেঝের পাশাপাশি জানলার কাচও পানি দিয়ে মুছুন। এতে বেশ কিছু সময় ঘর ঠান্ডা থাকবে।

টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে বরফ

ঘর ঠান্ডা করার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো বরফ। টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে এক বাটি বরফ রাখতে পারেন। এতে করে বরফের ঠান্ডা বাতাস ঘরজুড়ে ঠান্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে। বরফ গলে গেলেও ঘরজুড়ে অনেকক্ষণ ঠান্ডা অনুভূতি বজায় থাকে। তবে লক্ষ রাখবেন, এ সময় যেন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে।

তথ্যসূত্র: ফেমিনা ইন্ডিয়া

দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। গ্রীষ্মের এই অসহ্য গরম থেকে স্বস্তির সুবাতাস মিলছে না যেন কোথাও। তারপরও সিলেট অঞ্চলে, বিশেষ করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। এখানে সারা বছরই দেশ-বিদেশের পর্যটকের আনাগোনা থাকে। ভ্রমণপিপাসুদের থাকার জন্য উপজেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শ খানেক হোটেল ও রিসোর্ট। গরমে এসব হোটেল-রিসোর্টে আসা পর্যটকদের অনেকেরই চাহিদা থাকে সুইমিংপুলের। অতিথিদের চাহিদার চিন্তা করে সুইমিংপুল বানিয়েও রেখেছে অনেক হোটেল-রিসোর্ট। তেমনই কয়েকটির খোঁজ


গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টের সুইমিংপুল
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টের সুইমিংপুলছবি: সংগৃহীত

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে একটু দূরে সবুজে ঘেরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি জায়গায় গড়ে উঠেছে সিলেট বিভাগের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ। এই রিসোর্টে নানা সুবিধার সঙ্গে আছে সুইমিংপুল। রিসোর্টের অতিথিরাই শুধু এখানে সাঁতার কাটতে পারেন।

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের ডলুবাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। এই রিসোর্টের সুইমিংপুল তুলনামূলক বড়। এখানে রুম বুকিং দেওয়া অতিথিদের পাশাপাশি ফি প্রদান করে অন্যরাও সাঁতার কাটতে পারবেন। আবার ৯৫০ টাকায় ১ ঘণ্টা সাঁতার কাটাসহ দিনব্যাপী থাকা-খাওয়ার প্যাকেজও দিচ্ছে।

টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম। রিসোর্টে সুইমিংপুল রয়েছে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ব্রিটিশ কারিগর নামক স্থানে এই রিসোর্টের অবস্থান। রিসোর্টের দুই ও তিন রুমের বাংলো, ডিলাক্স ও টুইন রুমে অতিথি হলেই মিলবে সাঁতার কাটার সুযোগ।

টি হ্যাভেন রিসোর্টের সুইমিংপুল
টি হ্যাভেন রিসোর্টের সুইমিংপুল
ছবি: সংগৃহীত

টি হ্যাভেন রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কের পাশে উত্তরসুর এলাকায় টি হ্যাভেন রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে। রুম গেস্ট ছাড়াও টিকিটের বিনিময়ে অন্যরা ব্যবহার করতে পারেন এই রিসোর্টের পুল।

গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের অন্যতম পর্যটন গ্রাম রামনগর মণিপুরি পাড়া। এই গ্রামে সুন্দর পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে রিসোর্টটি। চা–বাগানের কাছাকাছি এই রিসোর্টে রয়েছে সুইমিং পুল। রুম গেস্ট ছাড়াও অন্যরা চাইলে এখানে টিকিটের বিনিময়ে সুইমিং করতে পারেন।

ডি’মোর শ্রীমঙ্গল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকার এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টটির বর্তমান নাম ডি’মোর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। এই রিসোর্টে রুম বুকিং দিলেই এক ঘণ্টা সুইমিংয়ের সুযোগ মেলে।

নভেম ইকো রিসোর্টের সুইমিংপুল
নভেম ইকো রিসোর্টের সুইমিংপুল
টি হ্যাভেন রিসোর্ট

নভেম ইকো রিসোর্ট

প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে নভেম ইকো রিসোর্ট। এটি শ্রীমঙ্গলের বিশামনি এলাকায় অবস্থিত। এখানে রুম বুকিং দেওয়া পর্যটকেরা সুইমিং করতে পারেন।

প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় সম্প্রতি গড়ে উঠেছে প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। এখানে রুম গেস্টদের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল।

ওয়াটার লিলি রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের উত্তরসুর এলাকায় ওয়াটার লিলি রিসোর্টের অবস্থান। রিসোর্টে একটিই বড়সড় সুইমিংপুল। রুম গেস্ট ছাড়াও নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে এখানে সাঁতার কাটার সুযোগ আছে।

রায়বাড়ির উত্তরসূরিদের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন পুরোনো বাড়িটি
রায়বাড়ির উত্তরসূরিদের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন পুরোনো বাড়িটিছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

গাঙ্গুটিয়া কোন দিকে?

ধামরাই উপজেলা সদরে গিয়ে একে একে জনা দশেক মানুষকে কথাটা জিজ্ঞেস করলাম। কেউ বললেন এলাকার নামটি প্রথম শুনলেন, কেউ বললেন চেনেন না। এ রকম চলতে চলতে সঠিক তথ্য পেলাম যাঁর কাছে, তিনি বললেন, ‘সোজা ১৫ কিলোমিটার যাবেন। সাইনবোর্ডে বারবাড়িয়া এলাকার নাম লেখা দেখে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বাকি পথ চিনিয়ে দেবে।’

তাঁর দেখানো পথে এগোতে থাকলাম। আসলে ধামরাই সদর থেকে ১৫ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি পথ গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন। অনেক কিছু বদল হলেও আমরা যে বাড়িতে যাব, সেখানে যাতায়াতের পথ বদলায়নি। বছর পাঁচেক আগের মতোই ইটবিছানো সরু পথটায় পাশাপাশি দুটি বাহন চলতে পারে না।

গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি
গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

ইটের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পাশের সবুজ ধানখেত, গাঙ্গুটিয়ার ছোট বাজার, মাটির বাড়িগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। খাঁ খাঁ তপ্ত দুপুরেও মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। সেখানে পৌঁছে খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটিও—গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি।

রায়বাড়িতে পৌঁছে দেখি গেট বন্ধ। কথা বলার জন্য আশপাশে যখন কাউকে খুঁজছিলাম, তখন একজন নারী এলেন। তিনিও ভেতরে প্রবেশ করবেন। রায়বাড়ির উত্তরসূরিরা অতিথিদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। সেই অনুমতি নিতে হয় আগেই। অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন তরুণ এসে সদর দরজা খুললেন। তরুণটি সে রকম কিছুই জিজ্ঞেস করেননি। আমি নিজ থেকেই আগমনের উদ্দেশ্য বললাম। তিনি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।


জমিদারবাড়িতে যাওয়ার পথ
জমিদারবাড়িতে যাওয়ার পথ
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের বাঁ দিকে একটি সীমানাঘেরা দেওয়া জায়গা চোখে পড়ল। সোজা তাকালে দেখা যায়, একতলা একটি ভবনের সংস্কারকাজ চলছে। ভবনের সামনের পিলারগুলোর গায়ে চিনি–টিকরির কারুকাজ। ওপরে ছাদের সম্মুখভাগে প্রাণী ও নারীর প্রতিমূর্তি। ধীর পায়ে এগোলাম। একাধারে কয়েকটি স্থাপনা। লম্বা একটি সারি। একেকটি স্থাপনা একেক রকম—কোনোটি একতলা, কোনোটি দ্বিতল। কোনোটি কিছুটা ক্ষয়ে গেছে। আবার কোনোটি ক্ষয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। জানালা ও দরজাগুলোতে ইউরোপীয় আদলে আয়রনের কারুকাজ। বসতবাড়িগুলোর সারিতে সরু প্রবেশপথ রয়েছে আরও ভেতরে যাওয়ার জন্য। জানি না অন্দরমহল বলা ঠিক হবে কি না। সেই পথ ধরে ভেতরে গেলাম। প্রবেশপথে লেখা রয়েছে গোবিন্দ ভবন। স্থাপনকাল ১২৭০ বঙ্গাব্দ। ভেতরের অবস্থা আরও বেশি ক্ষয়ে যাওয়া। কিছু ভবন স্যাঁতসেঁতে। ভেতরের ভবনগুলোর মধ্যে একটি ভবনের বারান্দার পিলারগুলো দেখলাম গথিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাকি ভবনগুলোর স্থাপত্যশৈলী উনিশ কি বিশ শতকের বাড়ির মতোই। গথিক স্থাপত্যের মতো সেই বারান্দা ধরে পথ চললে সামনেই একটি দিঘির দেখা মিলবে।

দিঘির ঘাট নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। এই বাড়িতে অনেক পাতকুয়া বা ছোট জলাধার আছে। একটি দেখতে পেলাম। আবারও বারান্দা ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম!

দেখলাম একজন নারী কাজ করছেন। এগিয়ে গিয়ে কথা বললাম। তাঁর নাম প্রতিমা সাহা। তিনি জমিদার গোবিন্দচন্দ্র রায়ের প্রপৌত্রের ঘরের নাতবউ। প্রতিমা সাহার কাছেই এই বাড়ির ইতিহাস জানলাম। এখন এ বাড়িতে বসবাস করছে জমিদারের সপ্তম বংশধর। তাঁরা সবাই মিলে কিছু সংস্কারকাজে হাত দিয়েছেন।

প্রতিমা সাহার সঙ্গে লেখক
প্রতিমা সাহার সঙ্গে লেখক
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহীর সৌজন্যে

গোবিন্দচন্দ্র রায়ের ছয় ছেলে এক মেয়ে ছিল। প্রতিমা সাহা জানালেন, ছয় ছেলের জন্য ছয়টি ভিন্ন ভবন নির্মাণ করেন গোবিন্দচন্দ্র। ভবনের দরজায় লেখা বাংলা সাল থেকে অনুমান করা যায়, এই বাড়ির বয়স ১৬০ বছরের মতো।

প্রথমে প্রবেশমুখে বাউন্ডারি দেওয়া যে জায়গাটা ছিল, সেটি সমাধিভূমি আর যে ভবনের কাজ চলছিল, সেটি ছিল বৈঠকখানা বা কাছারি ঘর। প্রতিমা সাহা বললেন, কাছারি ঘরের বয়স ১০০ বছর। ৬টি ভবনের সঙ্গে ৬টি কুয়া আছে।

১৯৭১ সালে গোবিন্দচন্দ্র রায়ের বংশের চারজনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। গোবিন্দ ভবনের চত্বরে তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে স্মৃতি সমাধি আছে। বর্তমানে ভবনগুলো রামগোপাল রায়, স্বদেশরঞ্জন রায়সহ গোবিন্দচন্দ্র রায়ের ছয় ছেলের পরবর্তী প্রজন্ম বসবাস ও দেখাশোনা করেন।

প্রতিটি ভবনের সঙ্গে আছে এমন কুয়া
প্রতিটি ভবনের সঙ্গে আছে এমন কুয়া
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

জমিদারবাড়ি দর্শন শেষ হতে হতে বৈশাখের গরম অনুভূত হলো। প্রতিমা সাহার কাছে বিদায় নিয়ে ধীরে ধীরে মূল ফটকের দিকে গেলাম। জমিদারবাড়ির কোল ঘেঁষে গাজীখালী নদী। এই ভরদুপুরেও নদীতে ছিপ ফেলে বসে আছেন জেলেরা। নদীতে পানি এখন অনেক কম। গাজীখালী নদী মানিকগঞ্জ জেলায় পড়েছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা জেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে, নদীর ওপারেই দেখতে পাচ্ছি মানিকগঞ্জ জেলা।

গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়িটি একটি সীমান্তবর্তী বাড়ি। ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন শেষ হলো, শুরু হলো মানিকগঞ্জ জেলা। একবিংশ শতকেও এই এলাকা কোলাহলমুক্ত। এখানে আসার সরু একটি ইটের পথ। ১৮৬৩ সালে এই অঞ্চল কেমন ছিল, ভাবার চেষ্টা করলাম। তখন কি পথ ছিল, না একেবারে জঙ্গলাকীর্ণ ছিল? এই গাজীখালী নদীই হয়তো ছিল চলাচলের একমাত্র পথ। হয়তো এ কারণেই নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল এই ধ্রুপদি স্থাপত্য। গাজীখালী নদী ও গোবিন্দ ভবনের যৌবন আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছিলাম।

রাজধানীর এত কাছে, আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এক দিন সময় করে।

বিশ্বে যেসব এলাকায় অধিকসংখ্যক দীর্ঘায়ু মানুষের বাস, সেসব এলাকা চিহ্নিত করতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন মার্কিন লেখক ড্যান বুয়েটনার। পাশাপাশি জানার চেষ্টা করেছেন কীভাবে এসব এলাকার অধিবাসীরা শারীরিক জটিলতা (যেমন হৃদ্‌রোগ, স্থূলতা, ক্যানসার কিংবা ডায়াবেটিস) ছাড়াই দীর্ঘ জীবন পেলেন। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। ‘ব্লু জোন’ বলে পরিচিত এমন পাঁচ এলাকার কথা জানাচ্ছেন


গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া
গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া
ছবি: ভিজিট গ্রিস

ইকারিয়া, গ্রিস

গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া। ২৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত দ্বীপটি তুরস্ক উপকূল থেকে আট মাইল দূরে আজিয়ান সাগরে অবস্থিত। বিস্ময়ে ভরা এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এখানে মধ্যবয়সী মানুষের (৪৫-৬৪ বছর) মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। বয়স বাড়লে মানুষকে যে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় (ডিমেনশিয়া) ভুগতে দেখা যায়, সেটাও এই দ্বীপবাসীর বয়স্কদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ইকারিয়াবাসীদের দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র তাদের ঐতিহ্যবাহী মেডিটারিয়ান ডায়েট। এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও স্থূলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। এতে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুঁটি, মাছ ও অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে পরিমিত মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শও থাকে এই ডায়েটে।

ওকিনাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস
ওকিনাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস
ছবি: উইকিপিডিয়া

ওকিনাওয়া, জাপান

জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপাঞ্চচলটির নাম ওকিনাওয়া। ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস। তবে পুরুষদের গড় আয়ুও কম নয়। ওকিনাওয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য জানতে গবেষকেরা কয়েক দশক ধরেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অনুসন্ধান চলছে তাঁদের জিনের গঠন এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা নিজেদের উৎপাদিত মিষ্টি আলু, সয়া বীজ, মুগওয়ার্ট, হলুদ এবং গয়া (করলা) নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখেন।

অলিয়াস্ত্রায় প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস
অলিয়াস্ত্রায় প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস
ছবি: সংগৃহীত

অলিয়াস্ত্রা অঞ্চল, সার্দিনিয়া, ইতালি

ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপের পার্বত্য অঞ্চলটির নাম অলিয়াস্ত্রা। এখানে প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস। এ অঞ্চলের লোকেরা সচরাচর কম আমিষযুক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত। খাদ্যাভ্যাসের কারণে তাঁদের ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যার কারণে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার নিম্নমুখী।

যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন
যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন
ছবি: ইরফান খান/লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস

লোমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন। তাঁদের সুস্বাস্থ্যের রহস্যের অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম আর ধর্মবিশ্বাস। লোমা লিন্ডা শহরে ‘সেভেনথ ডে অ্যাডভেন্টিস্টদের’ (প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের বিশেষ সম্প্রদায়) সর্বোচ্চ সংখ্যায় পাওয়া যায়। তাঁরা বিভিন্ন শস্য, ফল, বাদাম ও শাকসবজি বেশি খেয়ে থাকেন।

নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা
নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা
ছবি: ভিজিট কোস্টারিকা

নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা

এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যবয়সে মৃত্যুহার বিশ্বে সর্বনিম্ন। আর পুরুষ শতবর্ষীদের ঘনত্বের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। কীভাবে দীর্ঘ জীবন পান তাঁরা? গবেষকেরা বলছেন, নিকোয়া উপদ্বীপের মানুষেরা নিজেদের ফসল নিজেরা ফলান, সেখানকার পানি উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ, নিজেদের মধ্যকার গভীর সামাজিক বন্ধন এবং প্রাত্যহিক লো ইনটেনসিটির ব্যায়াম (সাঁতার, হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি) তাঁদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

[random][fbig2][#e74c3c]
Powered by Blogger.