বিএনপি
বিএনপি

এবার উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৬১ জনকে একযোগে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। আজ শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে এই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। বাকি ৩৫ জনের মধ্যে ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ১৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন।

বহিষ্কৃত যাঁরা

বিএনপির তালিকা অনুযায়ী, বহিষ্কৃত নেতারা হলেন পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দান দিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিব আল আমিন, দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, সৈয়দপুর (সাংগঠনিক জেলা) যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ আরফান সরকার, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সদস্য রিয়াজুল ইসলাম, নাটোরের লালপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি আরিফ, বাঘাতিপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জুলফিকার আলী, দিঘলিয়ায় খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. এনামুল হক, খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ, বরগুনা সদরে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার লেয়াকত হোসেন, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান, ময়মনসিংহ সদর থানা কৃষক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন নূর মোহাম্মদ আনির, নকলায় শেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য মোকসেদুল হক, ধর্মপাশায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বম্ভরপুরে উপজেলা বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ ও সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মোহন মিয়া, জামালগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল হক আফিন্দি, গোয়াইনঘাটে সিলেট জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম, হবিগঞ্জে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান, কক্সবাজারের পেকুয়ায় উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি শাফায়েত আজিজ, বান্দরবানের লামায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার ও চাঁদপুরে হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান।

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় ১৫৯টি উপজেলায় বিএনপির এই ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের পর তাঁদের নির্বাচন থেকে ফেরানোর নানা চেষ্টা করা হয়। এ লক্ষ্যে প্রার্থীদের কাছে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের একটি চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বোঝানোর জন্য। সব উপেক্ষা করেই তাঁরা নির্বাচনে নেমেছেন।

বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল করতে হলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন করবে না। সেখানে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া মানে এই অবৈধ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। দলের চেয়ে নির্বাচনই যদি বড় হয়, তাহলে তো তাঁদের আগে পদত্যাগ করা উচিত। আপনি দল করবেন, আবার দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না, এটা হতে পারে না।’

অন্যায় থেকে বেঁচে থাকার দোয়া 'নাউজুবিল্লাহ'

মন্দ কাজ দেখলেই অনেকে বলে থাকেন নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক বা সংক্ষেপে নাউজুবিল্লাহ। নাউজুবিল্লাহ একটি দোয়া, যা অন্যায় কাজ থেকে হেফাজত করে। এ দোয়ার মাধ্যমে খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়। এর অর্থ হলো, ‘এই খারাপ বা অন্যায় কাজ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।’

‘নাউজু’ শব্দের অর্থে ‘আমি আশ্রয় চাই’ বা ‘বিরত থাকতে চাই’। ‘বিল্লাহি’ অর্থ ‘আল্লাহর কাছে’। ‘মিন জালিক’ এই (খারাপ-মন্দ-অন্যায়-অপরাধ) থেকে। অর্থাৎ আমি এই খারাপ কাজ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।

হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন অদৃষ্টের অনিষ্ট থেকে, দুঃখ পাওয়া থেকে, শত্রুদের আনন্দ থেকে এবং বালা-মুসিবতের কষ্ট থেকে। (বুখারি ও মুসলিম)


অন্যায়-মন্দ কাজ সংঘটিত হতে দেখলে বা নিজেরা এতে জড়িত হয়ে গেলে স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক’ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা জরুরি।

খারাপ ও ইসলামবিরোধী কোনো কথা শুনলে, কাজ হতে দেখলে বা ভুলবশত নিজে করলে বা করতে শুরু করলে আল্লাহর কাছে মুক্তি বা আশ্রয় চাওয়ার জন্য এই দোয়া পড়তে হয়।


সুরা বাকারার অন্তর্নিহিত জ্ঞান ও ফজিলতের আলোচনা

‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা। বাকারা অর্থ গাভি। এই সুরার এক স্থানে গাভি নিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সুরাটি পবিত্র মদিনায় অবতীর্ণ হয়। এতে ৪০ রুকু, ২৮৬ আয়াত আছে।

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ নামে পরিচিত। এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকায় আল্লাহ–তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এ সুরার শেষ দুটি আয়াতের (২৮৫-২৮৬) রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য।

সুরা বাকারাকে মোটাদাগে ৯ ভাগে ভাগ করা যায়।

১ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা। (আয়াত ১-২০)

২য় ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান। (আয়াত ২১-৩৯)

৩য় ভাগ: বনি ইসরাইল জাতির প্রতি প্রেরিত আইনকানুন। (আয়াত ৪০-১০৩)

৪র্থ ভাগ: ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি। (আয়াত ১০৪-১৪১)

৫ম ভাগ: নামাজের দিক পরিবর্তন। (আয়াত ১৪২-১৫২)

৬ষ্ঠ ভাগ: মুসলিম জাতির ওপর পরীক্ষা। (আয়াত ১৫৩-১৭৭)

৭ম ভাগ: মুসলিম জাতির প্রতি প্রেরিত আইনকানুন। (আয়াত ১৭৮-২৫৩)

৮ম ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান। (আয়াত ২৫৪-২৮৪)

৯ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা। (আয়াত ২৮৫-২৮৬)


১ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা

শুরুর দিকে আল্লাহ কোরআন শরিফকে হেদায়াত ও সঠিক দিকনির্দেশনা হিসেবে মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন (আয়াত ২)। এই হেদায়াতকে যারা গ্রহণ করে তারা মোমিন বা বিশ্বাসী। যারা হেদায়াতকে অস্বীকার করে বর্জন করে তারা কাফির বা অবিশ্বাসী, আর যারা অল্প কিছুটা হেদায়াত গ্রহণ করে কিন্তু নিজেদের হীন স্বার্থে কাজে লাগায় তারা মুনাফিক বা কপট।

সুরার শুরুর দিকে আল্লাহ তিন প্রকার মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন। বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী ও কপট। তৃতীয় আয়াতে (আয়াত ৩-৫) তিনি অল্প কথায় বিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়েছেন। দ্বিতীয় আয়াতে (আয়াত ৬-৭) তিনি আরও অল্প কথায় অবিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর কপটদের পরিচয় দিতে তিনি ১৪ আয়াত (আয়াত ৮-২০) ব্যবহার করেছেন। যেহেতু কপটরা তাদের চিন্তাধারা গোপন রাখে, তাদের চিনতে কষ্ট হয়, তাই আল্লাহ এভাবে বিশদ বর্ণনা করে তাদের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এ তিন শ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে ডেকে তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন।


২য় ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান

১ম ভাগে বর্ণিত ইমান, কুফরি ও মুনাফেকি—সৃষ্টির শুরুর দিক থেকেই বিষয়গুলো ছিল। এই ভাগে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কথা বলেছেন, মানব সৃষ্টির শুরুতে অন্য সব সৃষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে মানুষ আদম (আ.)–এর সময়কার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ও আল্লাহর নেওয়া পরীক্ষায় তিনি যথাযথভাবে উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাঁর পরিণতির (পৃথিবীতে নেমে আসার ও পরে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার) কথা বর্ণিত হয়েছে।

৩য় ভাগ: বনি ইসরাইল জাতিকে পাঠানো আইনকানুন

আল্লাহ যেমন অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে পছন্দ করে আদম (আ.)–এর মাধ্যমে দুনিয়ায় আল্লাহর খলিফা বানিয়েছেন, তেমনি আস্তে আস্তে পৃথিবীতে অনেক মানুষ হওয়ার ফলে শুধু একজন মানুষ নয়; বনি ইসরাইল নামে একটা জাতিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, যারা আল্লাহর প্রদর্শিত পথ জানার পর অন্য সব জাতিকেও পথ দেখাতে পারে। সুরার এই বড় ভাগটিতে আল্লাহ তাদের দেওয়া অনুগ্রহ ও অনুগ্রহ পাওয়া সত্ত্বেও যে তারা তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি, তা বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছেন, যার অধিকাংশেই তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই ভাগে আল্লাহ বেশ কিছু উপদেশ ও জ্ঞান দিয়েছেন।

৪র্থ ভাগ: ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি

ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি বনি ইসরাইলিরা দাবি করতে থাকে যে, তাদের ওপর আল্লাহর যে অনুগ্রহ ছিল, এর ধারাবাহিকতায় সব নবীই ইসরাইলি হবে। আরব থেকে কেন মুহাম্মদ (সা.) নবী হবেন? জবাবে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)–এর কথা তুলে ধরেন ও ইবরাহিম (আ.)–এর পরীক্ষার কথা বলেন। ইবরাহিম (আ.) সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁকে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবেও বর্ণনা করা হয়। এরপর ইবরাহিম (আ.)–এর ছেলে ইসমাইল (আ.) ও পৌত্র ইয়াকুব (আ.)–এর কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বোঝাতে চান যে, দুই বংশেরই মূল পিতা ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁরা সবাই ছিলেন ‘মুসলিম’।


৫ম ভাগ: কিবলার পরিবর্তন

এই ভাগে ইবরাহিম (আ.)–এর তৈরি করা কাবার দিকেই কিবলা নির্ধারণ করা হয়। মুসলিমদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে। আল্লাহ এই জাতির ওপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন বলে অন্য সবাইকে বিভেদ ও অহংকার ভুলে এই কিবলা এবং জাতিকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

৬ষ্ঠ ভাগ: মুসলিম জাতির পরীক্ষা

২য় ভাগে আদম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা, ৩য় ভাগে বনি ইসরাইলের ওপর পরীক্ষা, ৪র্থ ভাগে ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা বর্ণনা করার পর এই ভাগে মূলত মুসলিম জাতির ওপর আল্লাহর পরীক্ষার বিষয়টি রয়েছে। আদম (আ.) পরীক্ষায় সফল হননি। বনি ইসরাইল জাতি অধিকাংশ পরীক্ষায় সফল হয়নি। ইবরাহিম (আ.) পরীক্ষায় শতভাগ সফল হয়েছেন। মুসলিম জাতির ওপরও আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছেন ও নেবেন, যেন তিনি দেখে নিতে পারেন আগের নিদর্শন থেকে শিখে তারা উত্তীর্ণ হতে পারে কি না।


৭ম ভাগ: মুসলমানদের কাছে পাঠানো আইনকানুন

৭ম ভাগে এসে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, কী কী আইনকানুনের মাধ্যম তিনি মুসলমানদের পরীক্ষা নেবেন। এই আইনকানুনের মধ্যে এ অংশে তিনি কেসাস, উত্তরাধিকার, রোজা, হজ, ব্যয়, জিহাদ, মদ, জুয়া, বিবাহ, নারী ও পরিবার, তালাক, নামাজ ইত্যাদি সম্পর্কিত আইনকানুন বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ এ ভাগে পবিত্র রমজান মাসকে মুসলমানদের দিয়েছেন।

৮ম ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান

এই অংশে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কথা বলেন। এরপর মূলত এই অংশে ৭ম ভাগেরই ধারাবাহিকতা করে পরীক্ষার অংশ হিসেবে অর্থব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থ কীভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে আয়, ব্যয় করা যায় এবং কোন আয়ব্যয় সবচেয়ে খারাপ, তা আল্লাহ এখানে বলে দিয়েছেন। অর্থলোভের বিষয়টিও এখানে উঠে এসেছে। ২য় ভাগে আদম (আ.)–কে যেমন শয়তান লোভ দেখিয়েছিল ও কুমন্ত্রণা দিয়েছিল, তেমনি এখানে শয়তানের দেওয়া কুমন্ত্রণা ও লোভের কথা উঠে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে মানুষকে বেশ কিছু জ্ঞান দিয়েছেন।

৯ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা

এই অংশটি আসলে উপসংহার। আগের সব ভাগের সারসংক্ষেপ হিসেবে এটি উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম ভাগের ইমান, দ্বিতীয় ভাগের সৃষ্টি ও উপদেশ, তৃতীয় ভাগের পূর্ববর্তী জাতির কথা, চতুর্থ ভাগের নবীর কথা, পঞ্চম ভাগের মুসলিম জাতি (আমরা), ষষ্ঠ ভাগের পরীক্ষা, সপ্তম ভাগের আইনকানুন, অষ্টম ভাগের উপদেশের কথা এখানে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি

সাহাবি সুহাইব রুমি (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়। তিনি রাসুল (সা.)–এর কাছ থেকে নিচের কাহিনিটি শুনেছেন।

এক বাদশাহর দরবারে একজন জাদুকর ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় এক সময় তিনি বুড়ো হলেন। তখন বাদশাহকে গিয়ে বললেন, আমাকে একজন বুদ্ধিমান বালক এনে দিন। আমি তাকে এই বিদ্যাটি শিখিয়ে দেব।’

বাদশাহ একটি বুদ্ধিমান বালককে জাদুকরের কাছে তুলে দিলেন। বালকটি যে পথে জাদুকরের কাছে যেত, সে পথে একজন পাদরির বাড়িও ছিল। আসা-যাওয়ার পথে বালকটি পাদরির কাছে গিয়ে বসত। তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনত। পাদরির প্রতি ধীরে ধীরে বালকটির মুগ্ধতা তৈরি হলো।

একদিন বালকটির যাওয়ার পথে এক বড় জন্তু বসে ছিল। যাওয়ার তোনো পথ খোলা নেই। বালকটি ভাবল, এটা জাদুকরি নাকি সত্য, তা পরীক্ষা করে দেখার এটিই উপযুক্ত সময়। সে একটি পাথরের টুকরা কুড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ, যদি পাদরির আমল তোমার কাছে জাদুকরের আমলের চেয়ে ভালো এবং পছন্দের বলে মনে হয়, তাহলে এই জন্তুকে মেরে ফেল, যাতে মানুষের যাতায়াতের পথটি খুলে যায়।’এই বলে বালকটি পাথর ছুড়লে জন্তুটি মারা গেল। 

বালক এবার পাদরির কাছে এসে সব খুলে বলল। পাদরি বললেন, ‘বাবা, এবার তুমি জ্ঞানের পূর্ণতায় পৌঁছে গেছ। তোমার পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। এই পরীক্ষায় কোনোভাবেই আমার নাম প্রকাশ করবে না।’ সেই বালকটিকে আল্লাহ অলৌকিক ক্ষমতা দিলেন। সে অন্ধ ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্তসহ বহু রোগীর জন্য দোয়া করতে লাগল। তারাও সুস্থ হয়ে উঠতে লাগল। তবে কেবল যারা খ্রিষ্টধর্মে  ইমান আনত, তারাই তার দোয়ায় উপকার পেত। একদিন বাদশাহর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির চোখের অন্ধত্বও তার দোয়ায় সেরে গেল।   তার অলৌকিক ক্ষমতার খবর ইহুদি বাদশাহর কানে গেলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন। বালকটির ধর্মে ইমান আনা কিছু লোককে বাদশাহর আদেশে হত্যা করা হলো। বালকটিকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েকজন লোককে ডেকে তিনি বললেন, ‘ওকে এউ উঁচু পাহাড়ের ওপর নিয়ে গিয়ে নিচে ফেলে দাও।’

বালক আল্লাহর কাছে দোয়া করলে পাহাড় কাঁপতে লাগল। ফলে সে ছাড়া সবাই পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেল। এবার বাদশাহ তাকে অন্য একদল লোকের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘একে একটি নৌকায় চড়িয়ে সমুদ্রে নিয়ে ডুবিয়ে দাও।’ সেখানেও বালকের দোয়ায় নৌকা উল্টে গেল। ফলে সবাই পানিতে ডুবে মারা গেল। কিন্তু বালকটি বেঁচে গেল।   এবার সেই বালক বাদশাহকে বলল, ‘আপনি যদি আমাকে হত্যা করতেই চান, তাহলে এর সঠিক পদ্ধতি হলো একটি খোলা ময়দানে মানুষ জমায়েত করুন। এরপর বালকের রবের নামে “বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম” বলে শুরু করছি—এই কথা বলে আমার গায়ে তির ছুড়ুন। তাহলে আমি মারা যাব।’   বাদশাহ তা-ই করলেন। বালকটি মারা গেল। কিন্তু সেখানে উপস্থিত লোকজন সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘আমরা এই বালকের রবের প্রতি ইমান আনলাম।’ 


বাদশাহ এবার আরও বেশি বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের জন্য গর্ত খুঁড়ে তাতে আগুন জ্বালানোর আদেশ দিলেন। এরপর বললেন, ‘যারা যারা এই বালকের ধর্ম থেকে ফিরে না আসবে, তাদের এই গর্তে ফেলে দাও।’ একে একে সব ইমানদার এগিয়ে এসে সেই গর্তে লাফ দিল। শেষে এল একটি নারীর পালা। তাঁর সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। তিনি একটু ইতস্তত করলে শিশুটি বলে উঠল, ‘মা, ধৈর্য ধরুন। আপনি সত্যের ওপর আছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩,০০৫)  

এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনের সুরা বুরুজে আল্লাহ বলেছেন, ‘অভিশপ্ত হয়েছিল (অগ্নিকুণ্ডের) লোকেরা, ওরা ইন্ধন সংযোগ করে তার (অগ্নিকুণ্ডের) পাশে বসে থাকত এবং দেখত বিশ্বাসীদের ওপর তারা যে অত্যাচার করত। ওরা তাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছিল শুধু এই কারণে যে তারা বিশ্বাস করত পরম শক্তিমান, পরম প্রশংসনীয় আল্লাহর, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আর আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে স্রষ্টা। যারা বিশ্বাসী নরনারীকে নির্যাতন করেছে ও তারপর তওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি আর দহন যন্ত্রণা।’ (সুরা বুরুজ, আয়াত: ৪-১০)

পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকা, ২৯ এপ্রিল
পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকা, ২৯ এপ্রিলছবি: সংগৃহীত

গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলাম এই নির্দেশনা দেন।

অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের কোনো গুজব ছড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া গুজব প্রতিরোধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি কোনো অবস্থাতেই চলতে দেওয়া যাবে না। তিনি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন।

অপরাধ পর্যালোচনা সভায় হারানো মুঠোফোন উদ্ধারে তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন অতিরিক্ত আইজিপি। তিনি বলেন, পুরোনো ফোন কেনাবেচার জায়গায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

সভায় ডাকাতির মামলা গুরুত্বসহ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া পুলিশ হত্যা মামলার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন এবং প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটর (তদারকি) করার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এই সভায় সব মহানগর পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপার অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দার
গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারছবি: সংগৃহীত

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ‘ভয়ংকর’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ। ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে। যদি তিনি এগুলো করে থাকেন, তবে ভয়ংকর অপরাধ করেছেন। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আজ বুধবার রাতে ঢাকার মিরপুর থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ডিবি। পরে রাতেই ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন–অর–রশীদ। সেখানে মিল্টনের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

ঢাকার মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন মিল্টন সমাদ্দার। তাঁর ভাষ্য, সেখানে আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেওয়া হয়। সম্প্রতি সাভারে জমি কিনে আশ্রয়কেন্দ্রের স্থায়ী নিবাস বানানো হয়েছে। মিল্টন সমাদ্দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রচার চালান। এ-সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র দেন। ফেসবুকে তাঁকে অনুসরণ করেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ।

সম্প্রতি কিছুদিন ধরে মিল্টনের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। মিল্টন ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরই মধ্যে তাঁর সঙ্গে কাজ করা এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন–অর–রশীদ বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ উঠেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আশ্রয়কেন্দ্রে অসহায় শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আসতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তিনি স্বীকার করেছেন, সেখানে (আশ্রয়কেন্দ্র) অপারেশন থিয়েটার (অস্ত্রোপচারকেন্দ্র) আছে। যদি অপারেশন থিয়েটার থাকে বা হাসপাতাল থাকে, সেটির লাইসেন্স থাকতে হয়। কিন্তু তিনি এ–সংক্রান্ত কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।’

মিল্টন সমাদ্দার আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বেশির ভাগ লাশ রাতে দাফন করতেন বলে একটি ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গেছে। এ প্রসঙ্গে ডিবি কর্মকর্তা হারুন–অর–রশীদ বলেন, ‘তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাতে লাশ দাফন করেন কেন? তিনি জবাব দিয়েছেন, রাতে লাশ দাফন না করলে মানুষ আমাকে (মিল্টন) বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এটা তিনি (মিল্টন) উত্তর দিয়েছেন। তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে।’

মিল্টন সমাদ্দার
মিল্টন সমাদ্দার
ছবি: সংগৃহীত

মিল্টন সমাদ্দার লাশ দাফনের যে হিসাব দিয়েছেন, সেখানেও গরমিল আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন–অর–রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এটাও জেনেছি, ইতিমধ্যে তিনি ৯০০ লাশ দাফন করেছেন। কিন্তু ৮৩৫টি লাশের হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। এসব লাশ দাফনের কোনো ডকুমেন্ট (নথি) তাঁর কাছে নেই। তিনি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, নিজেই মৃত্যুসনদ তৈরি করে চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল জাল (নকল) করতেন। তাঁর আশ্রমের পাশে একটা মসজিদ আছে, সেখান থেকেও প্রশ্ন উঠেছে, লাশের শরীরে কিডনির পাশে রক্তের দাগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

মিল্টন সমাদ্দারের দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন–অর–রশীদ বলেন, ‘তাঁর একটি আশ্রয়কেন্দ্র মিরপুরে এবং অন্যটি সাভারে। তিনি বলেছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০০ থেকে ৭০০ লোক রয়েছে। কিন্তু সেখানে (আশ্রয়কেন্দ্র) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০–৩০ বা ৪০ জনের বেশি নেই। আমাদের কথা হলো, আমরা তাঁকে নিয়ে (গ্রেপ্তার) এসেছি। কিছু অভিযোগকারী রয়েছে, তাঁরা মামলা করবেন। আমরা তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব, কত সংখ্যক মানুষ তাঁর আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। সেখানে কত সংখ্যক মানুষ মারা গেলেন। তিনি যেখানে অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করেছেন, সেখান থেকে কিডনি বিক্রি করেছেন কি না, সেই অভিযোগটিও তদন্ত করা হবে।’

মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে জানিয়ে হারুন–অর–রশীদ বলেন, ‘মিল্টনের উত্থান হচ্ছে বাবাকে পেটানোর পর এলাকাবাসী তাঁকে এলাকাছাড়া করে। তারপর শাহবাগে এসে একটি ফার্মেসিতে কাজ করেন। সেখানে ওষুধ চুরির কারণে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। একটা পর্যায়ে কিছু লেখাপড়া করেন। পরে মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন।’

রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ‘গাবতলী গবাদিপশুর হাট’ ইজারার দরপ্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ওরফে ডিপজল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ইজারামূল্যের পুরো টাকা পরিশোধ করেননি। এরই মধ্যে হাট দখলে নিয়ে তাঁর কর্মীদের দিয়ে হাসিল আদায় করছেন তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো টাকা পরিশোধ না করায় ডিপজলকে এখনো কার্যাদেশ প্রদান ও হাট হস্তান্তর করা হয়নি। তাঁদের দাবি, হাটে করপোরেশনের নিজস্ব কর্মীরা হাসিল আদায় করছেন।

গাবতলী পশুর হাটের ইজারা দিতে (বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য) গত ২ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ। দরপত্রে অংশ নেওয়া দুই ব্যক্তির মধ্যে ডিপজলের প্রস্তাবিত ইজারামূল্য ছিল সর্বোচ্চ, ১৭ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর আগের ইজারাদার লুৎফর রহমান দর দিয়েছিলেন ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।

হাটের ইজারাসংক্রান্ত কিংবা ডিপজলের টাকা পরিশোধ না করেই হাট দখলে নেওয়ার মতো অনিয়মগুলো লুকাতে সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা ও অন্য কর্মীদের রাখঢাক করার বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে মাহে আলমের সুযোগ ছিল ডিপজলের জামানত বাজেয়াপ্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।

দরপত্র যাচাই শেষে সর্বোচ্চ দরদাতা ডিপজলকে ইজারামূল্যের সঙ্গে অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে গত ২১ মার্চ চিঠি দেয় ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ। চিঠিতে দরপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া জামানতের ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বাদে আরও ১৭ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা সাত কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।

কিন্তু ডিপজল নির্ধারিত সময়ে পুরো টাকা পরিশোধ না করে গত ৩১ মার্চ উত্তরের মেয়র বরাবর টাকা জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। সময় চান হাট হস্তান্তরের আগের দিন, অর্থাৎ গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত (চৈত্র মাসের ৩০ তারিখ)। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও পুরো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন ডিপজল।

টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে দরদাতার জামানত বাজেয়াপ্ত করার বিষয় দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল। বিজ্ঞপ্তির ১২ নম্বরে উল্লেখ আছে, দরপত্র গৃহীত হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে দরমূল্য (জামানত বাদে বাকি টাকা), অনুমোদিত দরের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ১০ শতাংশ আয়কর, ইজারামূল্যের ওপর ৫ শতাংশ জামানত (ফেরতযোগ্য) পে-অর্ডার করে জমা দিতে হবে। ব্যর্থ হলে দরপত্রের সঙ্গে দেওয়া দরমূল্যের ৩০ শতাংশ জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হবে।

করি নাই (টাকা পরিশোধ), করব। এটা আমি সিটি করপোরেশনকে বলব। আপনি কে? আমি টাকা পরিশোধ করি বা করি না, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ডিপজল, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা

সব মিলিয়ে হাটের ইজারা পেতে ডিপজলের পরিশোধ করার প্রয়োজন ছিল ২২ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু সিটি করপোরেশন ডিপজলের জামানত বাজেয়াপ্ত করেনি।

হাট দখল করে হাসিল আদায়

রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট  
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট
ছবি: প্রথম আলো

গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, ডিপজলের নিয়োজিত কর্মীরা হাট পরিচালনা করছেন। পশু কিনতে আসা ব্যবসায়ী, কসাই ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করছেন হাসিলের টাকাও। সেখানে করপোরেশনের কর্মীদের কাউকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।

হাটের প্রবেশপথে হাসিল আদায় করার নির্মাণাধীন কক্ষের দেয়ালে ছিল একটি ব্যানার টানানো। তাতে লেখা, ইজারাসূত্রে মালিক ‘আলহাজ মনোয়ার হোসেন ডিপজল’। পাশের আরেকটি কক্ষে হাসিল আদায় করছিলেন এক ব্যক্তি।

দেওয়ান মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে ডিপজলের ভাতিজা বলে পরিচয় দেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হাটের বর্তমান ইজারাদার তাঁর চাচা ডিপজল। সিটি করপোরেশন গত ১৫ এপ্রিল তাঁদের কাছে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে। ওই দিন থেকেই তাঁরা হাসিল আদায় করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পত্তি বিভাগের একজন কর্মী প্রথম আলোকে জানান, ডিপজলের লোকেরাই হাট চালাচ্ছেন। হাটে হাসিল আদায়ের বিষয়ে তাঁদের কাউকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।  

তথ্য প্রদানে অসহযোগিতা

ইজারার তথ্য জানতে গত বুধবার এই প্রতিবেদক যান উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলমের কাছে। তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেনের মাধ্যমে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়। জনসংযোগ কর্মকর্তাকেও তিনি কোনো তথ্য দেননি।

হাট ইজারা নিতে ডিপজল মোট কত টাকা পরিশোধ করেছেন, কত টাকা এখনো বকেয়া আছে, কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে কি না, কবে হাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বকেয়া টাকা পরিশোধে কত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে—এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল।

হাটের ইজারাসংক্রান্ত কিংবা ডিপজলের টাকা পরিশোধ না করেই হাট দখলে নেওয়ার মতো অনিয়মগুলো লুকাতে সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা ও অন্য কর্মীদের রাখঢাক করার বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা জানান, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে মাহে আলমের সুযোগ ছিল ডিপজলের জামানত বাজেয়াপ্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার।  

হাট হস্তান্তরে আদালতের নির্দেশ

নির্ধারিত সময়ে ডিপজল পুরো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে গত ৪ এপ্রিল ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলমের কাছে হাট ইজারা নিতে আবেদন করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা লুৎফর রহমান। আবেদনে তিনি ডিপজলের দেওয়া সর্বোচ্চ দরটাই পরিশোধ করে ইজারা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু করপোরেশন থেকে কোনো সাড়া পাননি তিনি।

পরে উচ্চ আদালতে হাটের ইজারা নিয়ে একটি রিট করেন লুৎফর রহমান। গত ২৩ এপ্রিল রিটের নিষ্পত্তি করেন আদালত। আদেশে লুৎফর রহমানকে সর্বোচ্চ দর ১৭ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার অনুমতি দিতে এবং ১৪৩১ সনের জন্য তাঁর কাছে হাটটি হস্তান্তর করতে বলা হয়। রিটের বিবাদী উত্তর সিটির মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে এ নির্দেশ দেন আদালত।

লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায়ের অনুলিপি ও হাটের জন্য ব্যাংক পে-অর্ডারের সঙ্গে একটি আবেদন নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল তিনি সিটি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা—কোনো দপ্তরেই তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।


নির্মাণাধীন হাসিল আদায় কক্ষ  
নির্মাণাধীন হাসিল আদায় কক্ষ
ছবি: প্রথম আল

উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ইজারাদারকে এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। কারণ, কিছু টাকা বাকি আছে। ওই টাকা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অবিলম্বে টাকা জমা না দিলে তাঁকে হাট ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে। হাটটি বর্তমানে খাস আদায় পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডিপজলের হাট দখল ও তাঁর কর্মীদের মাধ্যমে পরিচালনা করার বিষয়টি জানানো হলে মীর খায়রুল আলম বলেন, ‘আমাদের লোক হাসিল আদায় করছে। দৈনিক ভিত্তিতে টাকা জমা হচ্ছে। যদি ওই রকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে।’ আদালতের রায়সংক্রান্ত কোনো কাগজ তাঁরা পাননি বলেও জানান তিনি।

এদিকে কার্যাদেশ ছাড়াই হাট দখল ও পরিচালনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায় একাধিকবার ডিপজলের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তাও পাঠানো হয়। পরে প্রতিবেদককে ফোন করে তিনি গতকাল শনিবার এফডিসিতে সরাসরি দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান।


গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিপজলের মুঠোফোনে আবারও বার্তা পাঠিয়ে গতকাল দেখা করার সময় জানতে চাওয়া হয়। তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাই গতকাল সকাল ১০টার কিছু পর তাঁর মুঠোফোনে কল করে সময় জানতে চান এই প্রতিবেদক। তখন তিনি জানান, এফডিসির সভা স্থগিত করা হয়েছে। তাই তিনি সেখানে যাবেন না।

পরে হাটের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে ডিপজল বলেন, ‘গাবতলী হাট নিয়ে আপনার কিসের দরকার? সিটি করপোরেশন জানে, আমি দিছি (ইজারার টাকা) কি দেই নাই। আমার টাকা ক্লিয়ার।’ এ সময় উত্তেজিত হয়ে ‘রাখেন টেলিফোন’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

পুরো বক্তব্য জানতে ডিপজলকে আবার ফোন করা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘করি নাই (টাকা পরিশোধ), করব। এটা আমি সিটি করপোরেশনকে বলব। আপনি কে? আমি টাকা পরিশোধ করি বা করি না, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’



[random][fbig2][#e74c3c]
Powered by Blogger.