ঘর ঠান্ডা রাখতে বারান্দায় গাছ রাখুন
ঘর ঠান্ডা রাখতে বারান্দায় গাছ রাখুন
ছবি: অধুনা

গরমের ধরন মনে হচ্ছে বদলে গেছে। যেসব বাড়িতে আগে ফ্যানের বাতাসেই দিব্যি গোটা গ্রীষ্মটা কাটিয়ে দেওয়া যেত, সেসব বাড়ির বাসিন্দারাও আজকাল অনলাইনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের (এয়ার কন্ডিশনার, সংক্ষেপে এসি) দামদরের খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু অনেকের জন্যই এসি এখনো এক বিলাসিতার নাম। প্রচণ্ড গরমে একটু শান্তির জন্য হলেও খুঁজতে হয় বিকল্প ব্যবস্থা। এই গরমে কীভাবে নিজের বাসা ঠান্ডা রাখবেন, সে উপায়ই বাতলে দেওয়া হয়েছে।

বাইরে রোদ উঠলে ঘরে পর্দা টেনে দিন
বাইরে রোদ উঠলে ঘরে পর্দা টেনে দিন
ছবি: অধুনা

সকাল সকাল পর্দা টেনে দিন

সকালের মিঠে রোদ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই সকালে রোদ উঠতে না উঠতেই পর্দা টেনে দিন। এতে করে সহজে ঘরে তাপ ঢুকবে না। ঘরও তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে।

দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার করলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার করলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
ছবি: অধুনা

দেয়ালে হালকা রঙের ব্যবহার

মনে রাখবেন, রং যত গাঢ় হয়, তত আলো শোষিত হয় এবং যত হালকা হয়, তত আলো বেশি প্রতিফলিত হয়। ঘরে যত বেশি আলো শোষিত হয়, তত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘরের ভেতর যতটা সম্ভব হালকা রং ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে দিনের বেলা ঘর তাপ ধরে রাখবে না। ফলে আলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ঠান্ডা হতে শুরু করবে।

ভারী সুতি পর্দা ব্যবহার

জানালায় ভারী সুতি পর্দা ব্যবহার করুন। এ ধরনের পর্দা ঘরে আলো প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এ ছাড়া হালকা রঙের বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ব্যবহার করুন। এতে করে বিছানাপত্র তাপ ধরে রাখবে না। ঘরও থাকবে তুলনামূলক ঠান্ডা।

ঘরে যতটা সম্ভব কম আলো জ্বালানো ভালো
ঘরে যতটা সম্ভব কম আলো জ্বালানো ভালো
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঘর রাখুন অন্ধকার

ঘরে আলোর পরিমাণ যত কম থাকে, ঘর তত বেশি ঠান্ডা থাকে। রাতে কাজ করলে চেষ্টা করবেন ঘর যতটা সম্ভব কম আলোকিত রাখতে। টিউবলাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা গেলে ভালো। এতে করে ঘর তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে।

ঘরে রাখতে পারেন ছোট গাছ

ঘরে গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
ঘরে গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে
ছবি: খালেদ সরকার

ঘরের ভেতর ছোট্ট একটি গাছ, যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। গাছ ঘরের ভেতর জমা হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, ফলে ঘরের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে। মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম-জাতীয় গাছ ঘরের সৌন্দর্যবর্ধন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, উভয় কাজেই বেশ উপকারী।

ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন

ঘরের তাপমাত্রা কম রাখতে একটু ভেজা ভেজা করে ঘর মুছুন। প্রয়োজন হলে একবারের পরিবর্তে ঘর মুছতে পারেন বেশ কয়েকবার। মেঝের পাশাপাশি জানলার কাচও পানি দিয়ে মুছুন। এতে বেশ কিছু সময় ঘর ঠান্ডা থাকবে।

টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে বরফ

ঘর ঠান্ডা করার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো বরফ। টেবিল বা স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে এক বাটি বরফ রাখতে পারেন। এতে করে বরফের ঠান্ডা বাতাস ঘরজুড়ে ঠান্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে। বরফ গলে গেলেও ঘরজুড়ে অনেকক্ষণ ঠান্ডা অনুভূতি বজায় থাকে। তবে লক্ষ রাখবেন, এ সময় যেন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে।

তথ্যসূত্র: ফেমিনা ইন্ডিয়া

দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। গ্রীষ্মের এই অসহ্য গরম থেকে স্বস্তির সুবাতাস মিলছে না যেন কোথাও। তারপরও সিলেট অঞ্চলে, বিশেষ করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। এখানে সারা বছরই দেশ-বিদেশের পর্যটকের আনাগোনা থাকে। ভ্রমণপিপাসুদের থাকার জন্য উপজেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শ খানেক হোটেল ও রিসোর্ট। গরমে এসব হোটেল-রিসোর্টে আসা পর্যটকদের অনেকেরই চাহিদা থাকে সুইমিংপুলের। অতিথিদের চাহিদার চিন্তা করে সুইমিংপুল বানিয়েও রেখেছে অনেক হোটেল-রিসোর্ট। তেমনই কয়েকটির খোঁজ


গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টের সুইমিংপুল
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টের সুইমিংপুলছবি: সংগৃহীত

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে একটু দূরে সবুজে ঘেরা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি জায়গায় গড়ে উঠেছে সিলেট বিভাগের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ। এই রিসোর্টে নানা সুবিধার সঙ্গে আছে সুইমিংপুল। রিসোর্টের অতিথিরাই শুধু এখানে সাঁতার কাটতে পারেন।

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের ডলুবাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। এই রিসোর্টের সুইমিংপুল তুলনামূলক বড়। এখানে রুম বুকিং দেওয়া অতিথিদের পাশাপাশি ফি প্রদান করে অন্যরাও সাঁতার কাটতে পারবেন। আবার ৯৫০ টাকায় ১ ঘণ্টা সাঁতার কাটাসহ দিনব্যাপী থাকা-খাওয়ার প্যাকেজও দিচ্ছে।

টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম। রিসোর্টে সুইমিংপুল রয়েছে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ব্রিটিশ কারিগর নামক স্থানে এই রিসোর্টের অবস্থান। রিসোর্টের দুই ও তিন রুমের বাংলো, ডিলাক্স ও টুইন রুমে অতিথি হলেই মিলবে সাঁতার কাটার সুযোগ।

টি হ্যাভেন রিসোর্টের সুইমিংপুল
টি হ্যাভেন রিসোর্টের সুইমিংপুল
ছবি: সংগৃহীত

টি হ্যাভেন রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কের পাশে উত্তরসুর এলাকায় টি হ্যাভেন রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে। রুম গেস্ট ছাড়াও টিকিটের বিনিময়ে অন্যরা ব্যবহার করতে পারেন এই রিসোর্টের পুল।

গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের অন্যতম পর্যটন গ্রাম রামনগর মণিপুরি পাড়া। এই গ্রামে সুন্দর পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে রিসোর্টটি। চা–বাগানের কাছাকাছি এই রিসোর্টে রয়েছে সুইমিং পুল। রুম গেস্ট ছাড়াও অন্যরা চাইলে এখানে টিকিটের বিনিময়ে সুইমিং করতে পারেন।

ডি’মোর শ্রীমঙ্গল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকার এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টটির বর্তমান নাম ডি’মোর হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। এই রিসোর্টে রুম বুকিং দিলেই এক ঘণ্টা সুইমিংয়ের সুযোগ মেলে।

নভেম ইকো রিসোর্টের সুইমিংপুল
নভেম ইকো রিসোর্টের সুইমিংপুল
টি হ্যাভেন রিসোর্ট

নভেম ইকো রিসোর্ট

প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে নভেম ইকো রিসোর্ট। এটি শ্রীমঙ্গলের বিশামনি এলাকায় অবস্থিত। এখানে রুম বুকিং দেওয়া পর্যটকেরা সুইমিং করতে পারেন।

প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় সম্প্রতি গড়ে উঠেছে প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। এখানে রুম গেস্টদের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল।

ওয়াটার লিলি রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলের উত্তরসুর এলাকায় ওয়াটার লিলি রিসোর্টের অবস্থান। রিসোর্টে একটিই বড়সড় সুইমিংপুল। রুম গেস্ট ছাড়াও নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে এখানে সাঁতার কাটার সুযোগ আছে।

রায়বাড়ির উত্তরসূরিদের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন পুরোনো বাড়িটি
রায়বাড়ির উত্তরসূরিদের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন পুরোনো বাড়িটিছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

গাঙ্গুটিয়া কোন দিকে?

ধামরাই উপজেলা সদরে গিয়ে একে একে জনা দশেক মানুষকে কথাটা জিজ্ঞেস করলাম। কেউ বললেন এলাকার নামটি প্রথম শুনলেন, কেউ বললেন চেনেন না। এ রকম চলতে চলতে সঠিক তথ্য পেলাম যাঁর কাছে, তিনি বললেন, ‘সোজা ১৫ কিলোমিটার যাবেন। সাইনবোর্ডে বারবাড়িয়া এলাকার নাম লেখা দেখে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বাকি পথ চিনিয়ে দেবে।’

তাঁর দেখানো পথে এগোতে থাকলাম। আসলে ধামরাই সদর থেকে ১৫ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি পথ গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন। অনেক কিছু বদল হলেও আমরা যে বাড়িতে যাব, সেখানে যাতায়াতের পথ বদলায়নি। বছর পাঁচেক আগের মতোই ইটবিছানো সরু পথটায় পাশাপাশি দুটি বাহন চলতে পারে না।

গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি
গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

ইটের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পাশের সবুজ ধানখেত, গাঙ্গুটিয়ার ছোট বাজার, মাটির বাড়িগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। খাঁ খাঁ তপ্ত দুপুরেও মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। সেখানে পৌঁছে খুঁজে পাওয়া গেল বাড়িটিও—গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়ি।

রায়বাড়িতে পৌঁছে দেখি গেট বন্ধ। কথা বলার জন্য আশপাশে যখন কাউকে খুঁজছিলাম, তখন একজন নারী এলেন। তিনিও ভেতরে প্রবেশ করবেন। রায়বাড়ির উত্তরসূরিরা অতিথিদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। সেই অনুমতি নিতে হয় আগেই। অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন তরুণ এসে সদর দরজা খুললেন। তরুণটি সে রকম কিছুই জিজ্ঞেস করেননি। আমি নিজ থেকেই আগমনের উদ্দেশ্য বললাম। তিনি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।


জমিদারবাড়িতে যাওয়ার পথ
জমিদারবাড়িতে যাওয়ার পথ
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের বাঁ দিকে একটি সীমানাঘেরা দেওয়া জায়গা চোখে পড়ল। সোজা তাকালে দেখা যায়, একতলা একটি ভবনের সংস্কারকাজ চলছে। ভবনের সামনের পিলারগুলোর গায়ে চিনি–টিকরির কারুকাজ। ওপরে ছাদের সম্মুখভাগে প্রাণী ও নারীর প্রতিমূর্তি। ধীর পায়ে এগোলাম। একাধারে কয়েকটি স্থাপনা। লম্বা একটি সারি। একেকটি স্থাপনা একেক রকম—কোনোটি একতলা, কোনোটি দ্বিতল। কোনোটি কিছুটা ক্ষয়ে গেছে। আবার কোনোটি ক্ষয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। জানালা ও দরজাগুলোতে ইউরোপীয় আদলে আয়রনের কারুকাজ। বসতবাড়িগুলোর সারিতে সরু প্রবেশপথ রয়েছে আরও ভেতরে যাওয়ার জন্য। জানি না অন্দরমহল বলা ঠিক হবে কি না। সেই পথ ধরে ভেতরে গেলাম। প্রবেশপথে লেখা রয়েছে গোবিন্দ ভবন। স্থাপনকাল ১২৭০ বঙ্গাব্দ। ভেতরের অবস্থা আরও বেশি ক্ষয়ে যাওয়া। কিছু ভবন স্যাঁতসেঁতে। ভেতরের ভবনগুলোর মধ্যে একটি ভবনের বারান্দার পিলারগুলো দেখলাম গথিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। বাকি ভবনগুলোর স্থাপত্যশৈলী উনিশ কি বিশ শতকের বাড়ির মতোই। গথিক স্থাপত্যের মতো সেই বারান্দা ধরে পথ চললে সামনেই একটি দিঘির দেখা মিলবে।

দিঘির ঘাট নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। এই বাড়িতে অনেক পাতকুয়া বা ছোট জলাধার আছে। একটি দেখতে পেলাম। আবারও বারান্দা ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম!

দেখলাম একজন নারী কাজ করছেন। এগিয়ে গিয়ে কথা বললাম। তাঁর নাম প্রতিমা সাহা। তিনি জমিদার গোবিন্দচন্দ্র রায়ের প্রপৌত্রের ঘরের নাতবউ। প্রতিমা সাহার কাছেই এই বাড়ির ইতিহাস জানলাম। এখন এ বাড়িতে বসবাস করছে জমিদারের সপ্তম বংশধর। তাঁরা সবাই মিলে কিছু সংস্কারকাজে হাত দিয়েছেন।

প্রতিমা সাহার সঙ্গে লেখক
প্রতিমা সাহার সঙ্গে লেখক
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহীর সৌজন্যে

গোবিন্দচন্দ্র রায়ের ছয় ছেলে এক মেয়ে ছিল। প্রতিমা সাহা জানালেন, ছয় ছেলের জন্য ছয়টি ভিন্ন ভবন নির্মাণ করেন গোবিন্দচন্দ্র। ভবনের দরজায় লেখা বাংলা সাল থেকে অনুমান করা যায়, এই বাড়ির বয়স ১৬০ বছরের মতো।

প্রথমে প্রবেশমুখে বাউন্ডারি দেওয়া যে জায়গাটা ছিল, সেটি সমাধিভূমি আর যে ভবনের কাজ চলছিল, সেটি ছিল বৈঠকখানা বা কাছারি ঘর। প্রতিমা সাহা বললেন, কাছারি ঘরের বয়স ১০০ বছর। ৬টি ভবনের সঙ্গে ৬টি কুয়া আছে।

১৯৭১ সালে গোবিন্দচন্দ্র রায়ের বংশের চারজনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। গোবিন্দ ভবনের চত্বরে তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে স্মৃতি সমাধি আছে। বর্তমানে ভবনগুলো রামগোপাল রায়, স্বদেশরঞ্জন রায়সহ গোবিন্দচন্দ্র রায়ের ছয় ছেলের পরবর্তী প্রজন্ম বসবাস ও দেখাশোনা করেন।

প্রতিটি ভবনের সঙ্গে আছে এমন কুয়া
প্রতিটি ভবনের সঙ্গে আছে এমন কুয়া
ছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

জমিদারবাড়ি দর্শন শেষ হতে হতে বৈশাখের গরম অনুভূত হলো। প্রতিমা সাহার কাছে বিদায় নিয়ে ধীরে ধীরে মূল ফটকের দিকে গেলাম। জমিদারবাড়ির কোল ঘেঁষে গাজীখালী নদী। এই ভরদুপুরেও নদীতে ছিপ ফেলে বসে আছেন জেলেরা। নদীতে পানি এখন অনেক কম। গাজীখালী নদী মানিকগঞ্জ জেলায় পড়েছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা জেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে, নদীর ওপারেই দেখতে পাচ্ছি মানিকগঞ্জ জেলা।

গাঙ্গুটিয়া জমিদারবাড়িটি একটি সীমান্তবর্তী বাড়ি। ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন শেষ হলো, শুরু হলো মানিকগঞ্জ জেলা। একবিংশ শতকেও এই এলাকা কোলাহলমুক্ত। এখানে আসার সরু একটি ইটের পথ। ১৮৬৩ সালে এই অঞ্চল কেমন ছিল, ভাবার চেষ্টা করলাম। তখন কি পথ ছিল, না একেবারে জঙ্গলাকীর্ণ ছিল? এই গাজীখালী নদীই হয়তো ছিল চলাচলের একমাত্র পথ। হয়তো এ কারণেই নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল এই ধ্রুপদি স্থাপত্য। গাজীখালী নদী ও গোবিন্দ ভবনের যৌবন আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছিলাম।

রাজধানীর এত কাছে, আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এক দিন সময় করে।

গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ঘরের জিনিসপত্র। ঢাকার ধামরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামটোলা এলাকায়
গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ঘরের জিনিসপত্র। ঢাকার ধামরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামটোলা এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ধামরাই উপজেলায় গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ধামরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামটোলা এলাকায় ইব্রাহিম হোসেনের চারতলা ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় দগ্ধ চারজনকে উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

দগ্ধ চারজন হলেন ফ্ল্যাটের ভাড়াটে নুরুল ইসলাম নান্নু মিয়া (৫৫), তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫০), মেয়ে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী নিশরাত জাহান সাথী (২২) ও ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আল হাদী সোহাগ (১৮)।

স্বজনেরা জানান, সাহ্‌রির জন্য রান্না করতে রান্নাঘরে যান সুফিয়া বেগম। তিনি গ্যাসের চুলা জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ফ্ল্যাটে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে তাঁরা চারজন দগ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ধামরাই ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ফ্ল্যাটের আসবাবসহ বেশ কিছু মালামাল পুড়ে গেছে।

ধামরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, তিতাসের গ্যাসের আবাসিক সংযোগের পাশাপাশি গ্যাস–সংকটের সময় তাঁরা সিলিন্ডার গ্যাসও ব্যবহার করতেন। গ্যাস সিলিন্ডার, নাকি আবাসিক গ্যাস সংযোগের গ্যাস থেকে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। আগুনে বাসাটির প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আগুনে নুরুল ইসলাম নান্নু মিয়ার শরীরের ৪৮ শতাংশ, সুফিয়া বেগমের ৮০ শতাংশ, নিশরাত জাহান সাথীর ১৬ শতাংশ ও আল হাদী সোহাগের ৩৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, অপরজনের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তাঁদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ছয়জন প্রার্থী বাম থেকে খগেন মুর্মু, মহম্মদ সেলিম, ঈশা খান চৌধুরী, খলিলুর রহমান, আবু তাহের ও শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী
ছয়জন প্রার্থী বাম থেকে খগেন মুর্মু, মহম্মদ সেলিম, ঈশা খান চৌধুরী, খলিলুর রহমান, আবু তাহের ও শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

তৃতীয় দফা লোকসভা নির্বাচন হবে ৭ মে। প্রথম দুটি পর্বে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল দ্বিমুখী। আর এবার হচ্ছে ত্রিমুখী লড়াই।

তৃতীয় পর্বে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ৪টিতে নির্বাচন হবে। এই চার আসনকে কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে ধরা হয়। তবে এখন এসব আসনে কংগ্রেসের প্রভাব অনেকটা কমে এসেছে। কংগ্রেসের ঘাঁটিতে লড়াই হচ্ছে ত্রিমুখী। প্রার্থী চার দল ও অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৫৭ জন। লড়াই হবে তিন দল ও জোটের। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি, অন্যদিকে কংগ্রেস-বাম দলের জোট।

লড়াইয়ের ক্ষেত্র তিনটি হলো উত্তর মালদা, দক্ষিণ মালদা, মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর আসন। এ চার আসনের এলাকা মূলত একসময়ের কংগ্রেস–প্রভাবিত। মালদহের কংগ্রেস নেতা গণি খান চৌধুরী ছিলেন এখানকার এক নামী নেতা ও কিংবদন্তি। রেলমন্ত্রী থাকাকালে তিনিই কলকাতায় এনেছিলেন পাতালরেল। দিয়েছিলেন বহু বেকারের চাকরি।

অন্যদিকে আরেকটি ইতিহাসখ্যাত আসন হলো মুর্শিদাবাদ। বাংলার এককালের রাজধানী। নবাব সিরাজের স্মৃতিবাহী। সেই আসনেও এবার লড়াই জোরদার হবে। তৃণমূল বিজেপি ছাড়া এ আসনে এবার লড়ছেন সিপিএম নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি লড়ছেন কংগ্রেস-বাম দলের জোটের প্রার্থী হয়ে।

এই কংগ্রেস গড়ের উত্তর মালদা আসনে এবার লড়ছেন তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নবাগত। সাবেক আইপিএস পুলিশ কর্মকর্তা। কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন মোস্তাক আলম, আর বিজেপির প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বিদায়ী সংসদ সদস্য খগেন মুর্মু।
দক্ষিণ মালদায় লড়ছেন তৃণমূলের শাহনেওয়াজ আলী রায়হান, কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরী। গণি খান চৌধুরীর বংশধর ঈশা খান। এই আসনের বিদায়ী সংসদ সদস্য হলেন ঈশা খানের বাবা আবু হাসেম খান চৌধুরী। বিজেপির প্রার্থী হয়ে লড়ছেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।

মুর্শিদাবাদে লড়ছেন তৃণমূলের আবু তাহের খান, বিজেপির গৌরী শঙ্কর ঘোষ এবং সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। সেলিম লড়ছেন কংগ্রেস-বাম দলের জোট প্রার্থী হিসেবে। আর জঙ্গিপুর আসনে লড়ছেন তৃণমূলের বিদায়ী সংসদ সদস্য খলিলুর রহমান, বিজেপির ধনঞ্জয় ঘোষ আর কংগ্রেসের মুর্তজা হোসেন। ফলে এই চার আসনে লড়াই হচ্ছে মূলত ত্রিমুখী। তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেস-বাম জোট প্রার্থীদের মধ্যে। গত নির্বাচনে এই চার আসনের মধ্যে দুই আসনে জিতেছিল তৃণমূল, একটি করে আসনে জিতেছিল কংগ্রেস ও বিজেপি।

২০১৯ সালের নির্বাচনে এই চার আসনে জিতেছিলেন যথাক্রমে মালদহ উত্তর আসনে বিজেপির খগেন মুর্মু। পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৯ হাজার ৫২৪ ভোট। হারিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মৌসম বেনজীর নূরকে। দক্ষিণ মালদহ আসনে জিতেছিলেন কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরী। পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৭০ ভোট। হারিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে। মুর্শিদাবাদ আসনে জিতেছিলেন তৃণমূলের আবু তাহের খান। পেয়েছিলেন ৬ লাখ ৪ হাজার ৩৪৬ ভোট। পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেসের আবু হেনাকে। আর জঙ্গিপুর আসনে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান। পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৮ ভোট। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপির নারী প্রার্থী মাহফুজা খাতুন ।

এবার এই চার আসনে মূলত লড়াই হবে ত্রিমুখী। তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেস-বাম জোট প্রার্থীদের মধ্যে। তবে এবার মুর্শিদাবাদ আসনে কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী মহম্মদ সেলিম জোর লড়াইয়ে থাকছেন। যদিও এই ৪ আসনের ওপর এবিপি আনন্দ ও সি-ভোটার সাম্প্রতিক এক জনমত সমীক্ষায় বলেছে, মালদহ উত্তরে খগেন মুর্মু, মালদহ দক্ষিণে ঈশা খান চৌধুরী, মুর্শিদাবাদে আবু তাহের এবং জঙ্গিপুরে খলিলুর রহমানের জয়ের সম্ভাবনা। অর্থাৎ ২০১৯ সালের ফলাফলই পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে ওই সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বে যেসব এলাকায় অধিকসংখ্যক দীর্ঘায়ু মানুষের বাস, সেসব এলাকা চিহ্নিত করতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন মার্কিন লেখক ড্যান বুয়েটনার। পাশাপাশি জানার চেষ্টা করেছেন কীভাবে এসব এলাকার অধিবাসীরা শারীরিক জটিলতা (যেমন হৃদ্‌রোগ, স্থূলতা, ক্যানসার কিংবা ডায়াবেটিস) ছাড়াই দীর্ঘ জীবন পেলেন। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। ‘ব্লু জোন’ বলে পরিচিত এমন পাঁচ এলাকার কথা জানাচ্ছেন


গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া
গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া
ছবি: ভিজিট গ্রিস

ইকারিয়া, গ্রিস

গ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া। ২৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত দ্বীপটি তুরস্ক উপকূল থেকে আট মাইল দূরে আজিয়ান সাগরে অবস্থিত। বিস্ময়ে ভরা এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। এখানে মধ্যবয়সী মানুষের (৪৫-৬৪ বছর) মৃত্যুহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। বয়স বাড়লে মানুষকে যে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় (ডিমেনশিয়া) ভুগতে দেখা যায়, সেটাও এই দ্বীপবাসীর বয়স্কদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ইকারিয়াবাসীদের দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র তাদের ঐতিহ্যবাহী মেডিটারিয়ান ডায়েট। এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও স্থূলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। এতে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুঁটি, মাছ ও অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে পরিমিত মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শও থাকে এই ডায়েটে।

ওকিনাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস
ওকিনাওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস
ছবি: উইকিপিডিয়া

ওকিনাওয়া, জাপান

জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপাঞ্চচলটির নাম ওকিনাওয়া। ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস। তবে পুরুষদের গড় আয়ুও কম নয়। ওকিনাওয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য জানতে গবেষকেরা কয়েক দশক ধরেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অনুসন্ধান চলছে তাঁদের জিনের গঠন এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা নিজেদের উৎপাদিত মিষ্টি আলু, সয়া বীজ, মুগওয়ার্ট, হলুদ এবং গয়া (করলা) নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখেন।

অলিয়াস্ত্রায় প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস
অলিয়াস্ত্রায় প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস
ছবি: সংগৃহীত

অলিয়াস্ত্রা অঞ্চল, সার্দিনিয়া, ইতালি

ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপের পার্বত্য অঞ্চলটির নাম অলিয়াস্ত্রা। এখানে প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস। এ অঞ্চলের লোকেরা সচরাচর কম আমিষযুক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত। খাদ্যাভ্যাসের কারণে তাঁদের ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যার কারণে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার নিম্নমুখী।

যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন
যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন
ছবি: ইরফান খান/লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস

লোমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন। তাঁদের সুস্বাস্থ্যের রহস্যের অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম আর ধর্মবিশ্বাস। লোমা লিন্ডা শহরে ‘সেভেনথ ডে অ্যাডভেন্টিস্টদের’ (প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের বিশেষ সম্প্রদায়) সর্বোচ্চ সংখ্যায় পাওয়া যায়। তাঁরা বিভিন্ন শস্য, ফল, বাদাম ও শাকসবজি বেশি খেয়ে থাকেন।

নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা
নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা
ছবি: ভিজিট কোস্টারিকা

নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকা

এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যবয়সে মৃত্যুহার বিশ্বে সর্বনিম্ন। আর পুরুষ শতবর্ষীদের ঘনত্বের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। কীভাবে দীর্ঘ জীবন পান তাঁরা? গবেষকেরা বলছেন, নিকোয়া উপদ্বীপের মানুষেরা নিজেদের ফসল নিজেরা ফলান, সেখানকার পানি উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ, নিজেদের মধ্যকার গভীর সামাজিক বন্ধন এবং প্রাত্যহিক লো ইনটেনসিটির ব্যায়াম (সাঁতার, হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি) তাঁদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করে।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

মেক্সিকো সিটির একটি নার্সিং হোমে কোভিড-১৯–এর টিকা নিচ্ছেন এক নারী
মেক্সিকো সিটির একটি নার্সিং হোমে কোভিড-১৯–এর টিকা নিচ্ছেন এক নারীছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

নারীরা পুরুষদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় বাঁচে, তবে তাদের পুরুষদের তুলনায় বেশি বছর অসুস্থ থাকতে হয়। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। স্বাস্থ্যগত অবস্থার দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে ব্যবধান বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা নারীর স্বাস্থ্যের উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্বে রোগবালাইয়ের ২০টি শীর্ষস্থানীয় কারণ পরীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান দেখা যায়। গত তিন দশকে নারী ও পুরুষের স্বাস্থ্যগত অবস্থার ব্যবধানগুলো পূরণে সীমিত অগ্রগতি হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, পেশির সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মাথাব্যথার মতো রোগগুলো বিশেষ করে নারীর শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। এগুলো প্রাণঘাতী না হলেও তা অসুস্থতা ও শারীরিক অক্ষমতা তৈরি করে।

অন্যদিকে পুরুষেরা অনানুপাতিক হারে এমন সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যা তাদের অকাল মৃত্যু ঘটায়। যেমন- হৃদ্‌রোগ, শ্বাসযন্ত্র, যকৃতের রোগ, কোভিড-১৯–এর মতো রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনা।

নারী ও পুরুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত অবস্থার যে ভিন্নতা আছে, তা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। এতে নারীরা জীবনভর অপেক্ষাকৃত উচ্চ মাত্রার অসুস্থতা ও শারীরিক অক্ষমতায় ভোগেন। আর এ অবস্থা নিয়েই তারা পুরুষদের চেয়ে বেশি বছর বাঁচেন।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-এর গবেষক ড. লুইসা সোরিও ফ্লর এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে যে গত ৩০ বছরে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ইস্যুতে বৈশ্বিকভাবে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা অসম। নারীরা দীর্ঘ আয়ু পেলেও তারা অপেক্ষাকৃত বেশি বছর অসুস্থ থাকে। যেসব পরিস্থিতির কারণে তাদের অসুস্থতা ও অক্ষমতা তৈরি হয়, তা সামাল দিতে সীমিত অগ্রগতি হয়েছে। যেসব পরিস্থিতির (প্রাণঘাতী নয়) কারণে নারীদের বিশেষ করে বয়স্ক অবস্থায় তাদের যে শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে, তার দিকে নজর দেওয়াটা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। একইভাবে পুরুষেরা অপেক্ষাকৃত উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন এবং প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হন।’

গবেষণার অংশ হিসেবে পুরুষ ও নারীদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর ২০টি কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বয়স ও অঞ্চল ভেদে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্যগুলো যাচাই করা হয়েছে।

এ গবেষণার জন্য ২০২১ সালে হওয়া গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ ও প্রোস্টেট ক্যানসারের মতো লিঙ্গভিত্তিক স্বাস্থ্য অবস্থার তথ্যগুলো নেওয়া হয়নি।  

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে অসুস্থতা ও মৃত্যুর শীর্ষ ২০টি কারণের মধ্যে ১৩টি কারণই পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। যেমন- কোভিড-১৯, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া, হৃদ্‌রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যকৃতের রোগের মতো সমস্যাগুলো নারীর চেয়ে পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা গেছে।

নারীরা যেসব সমস্যায় বেশি ভোগেন, তা হলো—মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা, বিষণ্নতা, মাথাব্যথা, উদ্বেগ, হাড় ও পেশির সমস্যা, স্মৃতিভ্রম, এইচআইভি। তবে গবেষণা বলছে, এসব কারণে নারীরা অসুস্থতা ও অক্ষমতায় ভুগলেও এতে তাদের অকাল মৃত্যু হয় না।


দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা  নানা কারণে সন্তান জন্ম দিতে চান না
দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা নানা কারণে সন্তান জন্ম দিতে চান নাছবি: এএফপি

বৃষ্টিস্নাত কোনো এক মঙ্গলবার ইয়েজিন তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে বন্ধুদের জন্য দুপুরের খাবার তৈরি করছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের উপকণ্ঠে এ বাড়িতে একাই থাকেন ‘সুখি’ মানুষটি।

বন্ধুরা মিলে যখন খাওয়া–দাওয়া শুরু করেন, তখন তাঁদের একজন কার্টুন ডায়নোসরের একটি সুপরিচিত মিম মুঠোফোনে বের করে দেখান। সেখানে ডায়নোসরটি বলছিল, ‘‘‘সাবধান’’। আমাদের মতো তোমরা নিজেদের বিলুপ্ত করে ফেল না।’

মিমটি দেখে হেসে দিলেন উপস্থিত সব নারীরা।

বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এ পতন চলছেই। এ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর নিজের রেকর্ড পেছনে ফেলছে দেশটি। জন্মহারের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা আনুমানিক অর্ধেকে নেমে আসবে।

ইয়েজিন ৩০ বছর বয়সী একজন টেলিভিশন প্রযোজক। মিমটির বিষয়ে তিনি বলছিলেন, ‘এটি মজার, কিন্তু অন্ধকারও। কেননা, আমরা জানি, আমরা নিজেরাই নিজেদের বিলুপ্তির কারণ হয়ে উঠতে পারি।’    

ইয়েজিন বা তাঁর বন্ধুদের কারও সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব নারী সন্তানবিহীন জীবন বেছে নিচ্ছেন, ইয়েজিন ও তাঁর বন্ধুরা ক্রমবর্ধমান সেই সমাজের অংশ।

বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এ পতন চলছেই। এ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর নিজের রেকর্ড পেছনে ফেলছে দেশটি।  

গত বুধবার প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় গত বছর জন্মহার আরও ৮ শতাংশ কমে শূন্য দশমিক ৭২ এ দাঁড়িয়েছে।

একজন নারী তাঁর জীবনে কত সংখ্যক সন্তান নিতে চান, জন্মহার সেই বিষয়টি নির্দেশ করে। কোনো দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এ হার ২ দশমিক ১ হওয়া উচিৎ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহারের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা আনুমানিক অর্ধেকে নেমে আসবে।

‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’

বিশ্বজুড়ে উন্নত দেশগুলোতে জন্মহারের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে কোনো দেশের অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো নয়। দেশটির ভবিষ্যৎ অনুমিত পরিস্থিতি ভয়ানক।

আগামী ৫০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে, সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য জনগোষ্ঠী ৫৮ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষের বয়স হবে ৬৫ বছরের বেশি।

এটি দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি, পেনশনগ্রহীতা ও দেশের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই খারাপ পূর্বাভাস দেয় যে, রাজনীতিবিদেরা এ অবস্থাকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ বলে ঘোষণা করেছেন।


এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেসব দম্পতির সন্তান রয়েছে, তাদের মাসে মাসে ভর্তুকি মূল্যে আবাসন ও বিনা মূল্যে ট্যাক্সিতে যাতায়াতের সুবিধা থেকে শুরু করে নগদ অর্থ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। শুধু বিবাহিতদের জন্য হলেও দেওয়া হয় হাসপাতালের বিল পরিশোধসহ অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা।

কিন্তু এমন আর্থিক সুবিধা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে জন্মহার বৃদ্ধিতে কাজে আসছে না। এ অবস্থায়  রাজনীতিবিদেরা ‘জরুরি অবস্থা’ মোকাবিলায় আরও ‘সৃজনশীল’ সমাধানের পথ খুঁজছেন। যেমন: দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে নার্সদের ধার করা, তাঁদের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম অর্থ পরিশোধ করা এবং ৩০ বছর বয়সের আগে তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া।  

কোরিয়ায় মনের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে গৃহস্থালির কাজ করবে ও সমানভাবে সন্তানের যত্নও নেবে।
ইয়েজিন, দক্ষিণ কোরিয়ার নারী

সমস্যা সমাধানে নীতি নির্ধারকেরা এত সব পথ খুঁজলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তরুণ জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের চাহিদার বিষয়ে শুনছেন না। তাই গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া ঘুরে বিবিসির সাংবাদিক নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সন্তান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কারণ জানার চেষ্টা করেছেন।

ইয়েজিন তাঁর বয়স যখন কুড়ির কোঠায় তখনই একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সামাজিক রীতিনীতি উপেক্ষা করা শুরু করেন। সেখানে একা থাকার বিষয়টিকে কারও জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এরপর, পাঁচ বছর আগে ইয়েজিন বিয়ে না করার ও সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘কোরিয়ায় মনের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে গৃহস্থালির কাজ করবে ও সমানভাবে সন্তানের যত্নও নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর যে নারীদের শুধু সন্তানই আছে (উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নন) তাঁদের প্রতি সদয় আচরণ করা হয় না।’

‘কাজের বিরতিহীন চক্রে বাঁধা জীবন’

বিয়ে, সন্তানগ্রহণ—এসবের চেয়ে টেলিভিশন চ্যানেলে পেশাজীবন গড়াতেই মনোযোগ দিয়েছেন ইয়েজিন। তাঁর যুক্তি, চাকরি করতে গিয়ে তাঁর হাতে এমন সময় নেই যে, তিনি সন্তান নেবেন বা সন্তান লালন–পালনের কাজ করবেন।

ইয়েজিন তাঁর অফিসে ৯টা–৬টা কাজ করেন। তবে বলেন, সাধারণত রাত ৮টার আগে বের হতে পারেন না। এর বাইরে আছে অতিরিক্ত সময়ের কাজ। যখন বাড়িতে ফেরেন, তখন ঘরদোর পরিষ্কার ও ঘুমানোর আগে কিছু শরীরচর্চা করার সময় পান।

‘আমি আমার কাজকে পছন্দ করি। এটি আমাকে দারুণ পূর্ণতা এনে দেয়। তবে কোরিয়ায় কাজ করাটা কঠিন। আপনি কাজের এক বিরতিহীন চক্রে বাঁধা পড়বেন’, বলেন ইয়েজিন।


[random][fbig2][#e74c3c]
Powered by Blogger.